ইউরোপে দাবানল: গ্রিস, আলবেনিয়া ও তুরস্কে পুড়ছে বনভূমি

গ্রিস দাবানলের আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি
গ্রিস দাবানলের আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি | ছবি: সংগৃহীত
0

তীব্র দাবদাহের মধ্যে একের পর এক দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের নানা প্রান্তে। গ্রিস ও কসোভোর পর দাবানলে পুড়ছে বলকান উপদ্বীপ রাষ্ট্র আলবেনিয়ার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। ২০টি সক্রিয় দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দমকল বিভাগ, ঘর ছাড়ছে বাধ্য হয়েছেন ২ হাজারের বেশি বাসিন্দা। এদিকে, গ্রীষ্ম মৌসুমে বছরের তৃতীয় তাপপ্রবাহের কবলে ভূমধ্যসাগরীয় দেশ গ্রিস। সঙ্গে যোগ হয়েছে কাথেরা দ্বীপের মারাত্মক দাবানল। একই পরিস্থিতি দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ ঘেঁষা দেশ তুরস্কে।

আলবেনিয়া

মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে অন্তত ২০টি পয়েন্টে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের আগুন। জনমানবশূন্য হয়ে গেছে ৬টি গ্রাম। পুড়ে ছাই ১০টির বেশি আবাসিক ভবন, ঘর ছাড়া ২ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। শুক্রবার দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার বুলকিজা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলটিতে ৯০ জন সেনাসদস্য ও দু’টি হেলিকপ্টার পাঠায় আলবেনিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ। তীব্র মৌসুমি বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া আর বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে দমকল বিভাগকে। নিমেষেই পুড়ে গেছে শত শত হেক্টর পাইনের বন।

গ্রিস

এদিকে, চলতি মৌসুমের তৃতীয় তাপপ্রবাহের মধ্যে আবারও দাবানলে আক্রান্ত গ্রিস। শনিবার (২৬ জুলাই) কাথেরা দ্বীপে এই দাবানলের সূত্রপাত। গ্রিসসহ অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলকে দাবানলের হটস্পট হিসেবে গণ্য করেন পরিবেশবিদরা। একইসঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়া ও তাপপ্রবাহ যোগ করেছে বাড়তি শঙ্কা। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ জানায়, শনিবার দেশটিতে সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

শুক্রবার থেকে মোট ৫২টি দাবানল স্পটের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট। একইসঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে ৪৪টি দমকল যান, ৭টি হেলিকপ্টার ও ১০টি বিমান। এখনও পর্যন্ত ৪৪টি স্পটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও সক্রিয় আছে ৮টি স্পট। এরমধ্যে রাজধানী এথেন্স থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ক্রিয়োনেরি শহরের দাবানল শঙ্কায় ফেলেছে স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা বলেন, ‘চোখের নিমেষে আগুন ছড়িয়ে পড়লো। তীব্র বাতাসের কারণে এ ভয়াবহ অবস্থা। আগুন পাহাড় থেকে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক বাড়িঘর পুড়ে গেছে। যেখানে তাকাচ্ছি সেখানেই আগুন। কিছুক্ষণ আগে যেখানে আগুন ছিলো না এখন সেখানেও আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে। সতর্ক হওয়া ছাড়া উপায় কী!’

কসোভো

একই পরিস্থিতি ইউরোপের বলকান অঞ্চলের রাষ্ট্র কসোভোতেও। শনিবার দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া সক্রিয় ১৭টি দাবানলের মধ্যে ১২টি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে দমকল বিভাগ। স্থানীয়রা প্রাণে রক্ষা পেলেও আগুনে পুড়ে গেছে বসতবাড়ি, গবাদি পশু ও খামার। দেশটির উত্তরাঞ্চলের আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর হেলিকপ্টার।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘আগুন মানুষই লাগিয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দমকল কর্মীরা এসেছেন। ভেবেছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে কিন্তু তা হচ্ছে না। নিজেরা প্রাণে বাঁচলেও আমাদের ৮টি গরু আগুনে পুড়ে মারা গেছে।’

তুরস্ক

অন্যদিকে, চলতি মাসের শুরু থেকে একের পর দাবানলের কবলে পড়ছে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ ঘেঁষা দেশ তুরস্ক। রিসোর্ট সিটি হিসেবে খ্যাত উপকূলীয় শহর এন্তালিয়ার দাবানল নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে হেলিকপ্টার। আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় দমানো যাচ্ছে না আগুন।

দক্ষিণ কোরিয়া

এদিকে বর্ষা মৌসুমের কারণে এশিয়ার নানা প্রান্তে যখন ঝড়-বন্যার প্রাদুর্ভাব তখন ৩৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নাজেহাল দক্ষিণ কোরীয় বাসিন্দারা। তাপপ্রবাহ পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় দেশজুড়ে দাবদাহ সতর্কতা জারি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার জলবায়ু মন্ত্রণালয়।

ইএ