গেলো সোমবার (২৮ জুলাই) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। ৫ দিনের টানা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অবশেষে সংঘাতের অবসান হয়। মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ ৫ দেশের প্রতিনিধিরা। পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, একটি টেকসই ও কার্যকর উপায়ে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কাজ করবে দুই পক্ষ।
তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা পরই তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। থাই সেনাদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্তবর্তী ৫টি অঞ্চলে আক্রমণ করে কম্বোডিয়া। জবাবে থাইল্যান্ডও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে কম্বোডিয়া।
এমন অবস্থায় দুই দেশের স্থানীয় কমান্ডারদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কিত সীমান্তে শান্তি ফেরাতে এবং বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিজ আবাসস্থলে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। তাদের এই বৈঠকের পরই কিছুটা শান্ত হয় সীমান্ত পরিস্থিতি। এছাড়া সীমান্তে সেনাদের উপস্থিতি কমানোসহ আহত ও নিহতদের হস্তান্তরে রাজি হয় তারা।
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর নিয়ে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের অভিযোগ, আপাতত সংঘাত বন্ধ হলেও, যেকোনো সময় তা আবার বিস্তৃত হতে পারে। এখনও আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘কম্বোডিয়ার ওপর বিশ্বাস নেই। তারা প্রতিশোধ নিতে যেকোনো সময় আবারও হামলা চালাতে পারে।’
আরেকজন বলেন, ‘সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। হামলা বন্ধ করুক, যাতে সবাই বাড়ি ফিরে যেতে পারে।’
কম্বোডিয়ার ওডার মিঞ্চে প্রদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা নিজ নিজ আবাসস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতির কার্যকরের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় তারা বাড়ি যাচ্ছেন।
স্থানীয় এক বাসীন্দা বলেন, ‘দুই দেশই যুদ্ধ বন্ধে সম্মত হয়েছে। এখন বাস্তুচ্যুত সবাই বাড়ি ফিরতে পারবে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত।’
গেলো সপ্তাহে শুরু হওয়া থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৫ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ৪০ জন। এসময় বাস্তুচ্যুত হয়েছে দুই দেশের ৩ লাখের বেশি মানুষ, যা গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাত ছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত বিরোধ শত বছরের পুরনো। সম্প্রতি এক সেনা নিহতের ঘটনায় তা পূর্ণমাত্রায় রূপ নেয়। এরপরই শুল্ক নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।