ফ্রান্সের পর যুক্তরাজ্য। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্টারমার প্রশাসনের স্বীকৃতি প্রদানের সম্ভাবনায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববাসী। প্রায় ২২ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ ও ৬০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির পরেও ছোট এই পদক্ষেপেই পরিবর্তিত হতে পারে বিশ্ব রাজনীতি। যদিও জুড়ে দেয়া শর্তের কারণে ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তার দোলাচল।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য দ্বিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। গাজায় গণহত্যা বন্ধ করে মানবিক পরিস্থিতি উন্নতির দায়িত্ব নিতে হবে ইসরাইলকে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে হাঁটতে হবে। বন্ধ করতে হবে পশ্চিম তীর অধিগ্রহণ। অন্যথায় আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিবে যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তের মাধ্যমে মানবিক সংকট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে সমর্থন করছি। টেকসই যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি বিস্তৃত শান্তি পরিকল্পনার দিকে অগ্রসর হতে হবে।’
এদিকে স্কটল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা হয়নি। স্টারমার প্রশাসনের সিদ্ধান্ত হামাসের জন্য পুরস্কারস্বরূপ বলে মন্তব্য করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুরে কথা বলেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীও। তার দাবি, ইসরাইলের শত্রু জিহাদী গোষ্ঠীগুলো ভবিষ্যতে ব্রিটেনের নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘দেখুন এর মাধ্যমে তারা হামাসকে পুরস্কৃত করছে। আমার মনে হয় তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। আমি এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে নই। তাদের পুরস্কৃত করা হোক, এটাও চাই না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল বিরোধিতা করলেও যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, সংঘাতের চক্র শেষ করতে একযোগে কাজ করবে দুই দেশ। যা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। যদিও বিপরীত অবস্থানে জার্মানি। চ্যান্সেলর জানান, দ্বিরাষ্ট্র সমাধান দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিতের সবশেষ ধাপ। তাই নিকট ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি প্রদানের পরিকল্পনা নেই জার্মানির।
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ বলেন, ‘কোনো একদিন দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই শান্তি স্থাপনের একমাত্র সুযোগ হিসেবে সামনে আসবে। যদিও আমরা এখন এমন কোনো পরিকল্পনা করছি না। এটি সবশেষ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল ব্যারো বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগে যুক্তরাজ্য যুক্ত হওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দুই দেশের নেতৃত্বে সংঘাতের চক্র শেষ করা হবে। গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ ও লজ্জাজনক। যেভাবেই হোক এটি বন্ধ করতেই হবে।’
এদিকে সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাল্টা। এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এরপরই দেশটিতে শুরু হয় উৎসব। কয়েক হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে আসেন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিচার নিশ্চিতের আহ্বানও জানানো হয়।