এদিকে, মার্কিন শুল্কের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় ভারতের পোশাক, জুয়েলারি ও অটোমোবাইল শিল্প। নিম্নমুখী দেশটির শেয়ারবাজারও। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিতের কথা জানায় নয়াদিল্লি। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির কফিনে পেরেক মারছেন ট্রাম্প। এমনটাই মত খোদ মার্কিন অর্থনীতিবিদের।
রাশিয়ার সঙ্গে তেল কেনায় শাস্তি হিসেবে যখন ভারতের ওপর একের পর এক শুল্ক হার বাড়িয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তখন ট্রাম্পের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।
এই ইস্যুতে শুক্রবার ফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের বিষয়টি ক্রেমলিন নিশ্চিত করার আগেই মূলত ফোনে কথা বলেন তারা।
মূলত ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় এই দুই নেতার। ট্রাম্পের সম্পূরক শুল্কের চাপে বৈশ্বিক অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে বিষয়টি জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হয় পুতিন-মোদির মধ্যে।
আরও পড়ুন:
এদিকে ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপে দেশটির তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল ও জুয়েলারি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশটির জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রত্ন ও গহনা রপ্তানি করেন তারা। যা এই খাতে ভারতের মোট রপ্তানির ৩০ শতাংশ। তবে তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের শুল্কহার কম হওয়ায় তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারত পিছিয়ে পড়বে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্কারোপ মূলত প্রস্তুতকারকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। কারণ ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের কারণে জুয়েলারি প্রস্তুতে খরচ বেড়ে যাবে। এতে এই শিল্পের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
জুয়েলারির পাশাপাশি মার্কিন শুল্কহারে ভারতের পোশাক শিল্পও পৃষ্ট হতে পারে। শাহী এক্সপোর্টস, ওয়েলস্পান, ইন্দো কাউন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, ট্রাইডেন্ট এবং গোকালদাস এক্সপোর্টসের মতো পোশাক এবং টেক্সটাইল কোম্পানিগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
২০২৪ সালে কোম্পানিগুলো ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে এবং চলতি বছরের প্রথমার্ধে ওয়ালমার্ট, টার্গেট, কস্টকো এবং গ্যাপসহ মার্কিন ক্লায়েন্টদের কাছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য পাঠিয়েছে। এছাড়াও মার্কিন শুল্কের কারণে নিম্নমুখী রয়েছে ভারতের স্টক মার্কেটের শেয়ারের দরও।
ট্রাম্পের চাপিয়ে দেয়া শুল্কের জন্য যখন নাজেহাল দশা তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে ভারত। চলতি সপ্তাহেই এই ইস্যুতে কথা বলতে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা ছিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের। তবে তা আপাতত বাতিল হয়েছে বলে সূত্রের বরাতে নিশ্চিত করেছে রয়টার্স।
এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির কফিনে পেরেক পুঁতছেন ট্রাম্প। এমনটাই মত খোদ মার্কিন অর্থনীতিবিদের।
নয়াদিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের এ টানাপড়েন গত কয়েক দশকে দেখেনি বিশ্ব। তাই প্রশ্ন জাগছে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের দায়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা আর কতদূর বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মোদি এরইমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশের ১৪০ কোটি মানুষের তেলের জন্য রাশিয়ার দ্বারস্থ হওয়া বন্ধ করবেন না তিনি।