দূষণে ঢেকে যাচ্ছে কাশ্মীরের সৌন্দর্য

ধোঁয়া আর দূষণে কাশ্মীর
ধোঁয়া আর দূষণে কাশ্মীর | ছবি: সংগৃহীত
0

অপার সৌন্দর্যের কাশ্মীর, যা পৃথিবীর স্বর্গ নামে পরিচিত, তা এখন বায়ু দূষণের কবলে। ডিসেম্বর মাস এলেই কাশ্মীরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। চোখ জ্বালা করে, নাক চুলকায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা হতাশ। যারা সৌন্দর্যের খোঁজে আসে, তারা এখন দেখছে কুয়াশা আর দূষণের মিশেল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্জ্য পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া, কাঠ ও কয়লা পোড়ানো থেকে সৃষ্টি হয় এমন দূষিত আবহাওয়া।

কাশ্মীর, পৃথিবীর স্বর্গ। যেখানে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়া যায়। যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর জড়ো হয় হাজারো পর্যটক, সেই অপার সৌন্দর্যের কাশ্মীর এখন বায়ু দূষণের কবলে।

বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে কাশ্মীরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। চোখ জ্বালা, ত্বকে চুলকানিসহ শ্বাসকষ্ট হয় অনেকের। যেখানে পাখির কলতানে ঘুম ভাঙতো, সেই উপত্যকায় এখন কাশির শব্দ, ধুলো আর ধোঁয়া।

এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা হতাশ। সৌন্দর্যের খোঁজে এসে দেখছেন কুয়াশা আর দূষণের মিশেল। শীত এলেই কাশ্মীরে এমন আবহাওয়া পরিবর্তন। ঠাণ্ডা বাতাস নিচে আটকে চাদরের মতো করে ঢেকে দেয় গরম বাতাস।

একজন পর্যটক বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালেও কাশ্মীরে এসেছিলাম… তখন খুব সুন্দর ছিল, কোনো দূষণ ছিল না। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে দূষণ অনেক বেড়েছে। চারদিকে কুয়াশা আর স্মগ। কাশ্মীরের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। ইশ, যদি তুষারপাত হতো, তাহলে দূষণ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।’

এছাড়া কাশ্মীরের প্রাকৃতিক ভূগঠনেরও আছে বড় ভূমিকা। উপত্যকা চারদিক পাহাড়ে ঘেরা। বাতাস সহজে বের হতে পারে না। সবমিলিয়ে ধুলো, ধোয়া আর কুয়াশায় সৃষ্টি হয় এক ধোঁয়াশা, যা স্মগ নামেও পরিচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। গেল কয়েক বছর ধরেই ডিসেম্বর মাসে এমন পরিস্থিতি। বর্জ্য পোড়ানো, যানবাহনের ধোঁয়া, কাঠ ও কয়লা পোড়ানোও এজন্য দায়ী।

পরিবেশবিদ শম্ভবী শুক্লা বলেন, ‘কাশ্মীরে শীতকালে মিক্সিং হাইট খুব কম থাকে। মিক্সিং হাইট হলো সেই উচ্চতা যেখানে দূষিত কণাগুলো ছড়িয়ে মিশতে পারে। যখন সেই উচ্চতা কমে যায়, দূষিত কণাগুলো ভূপৃষ্ঠের কাছে জমে থাকে। শীতকালে বাতাসের গতি কম থাকায় শহরের ভেতরে দূষণ আরও জমে থাকে। আর কাশ্মীর যেহেতু পর্যটন কেন্দ্র, তাই মানুষের আনাগোনা ও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ে। ফলে দূষণ শীর্ষে পৌঁছায়।’

এদিকে ধুলো, ধোয়া আর কুয়াশায় মিশ্রিত আবহাওয়া উপত্যকার মানুষের ওপর ফেলেছে গভীর প্রভাব। শীতে তীব্র ঠাণ্ডায়, হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। বয়স্ক, শিশু, আর হাঁপানির রোগীরা এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এখন ঘরের বাইরে বের হওয়া মানেই ঝুঁকি। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের। চিকিৎসক, পরিবেশবিদসহ স্থানীয় বাসিন্দা- সবাই এখন চাইছে সচেতনতা, কঠোর নীতি আর দ্রুত পদক্ষেপ।

ইএ