ভূমিকম্পে মিয়ানমারে প্রাণহানি বেড়ে ১৭শ', থাইল্যান্ডে ১৭

ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে | এখন টিভি
0

স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দেশটিতে এরইমধ্যে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৭শ'। আহত প্রায় সাড়ে তিন হাজার। অন্যদিকে থাইল্যান্ডে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। ব্যাংককে বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে ৩২ জনকে জীবিত এবং ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ৮৩। ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যেও মিয়ানমার জান্তা বিদ্রোহীদের নির্মূলে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ জাতিসংঘ।

মিয়ানমারে প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প আঘাত হানার সময়টিতে উৎসস্থল থেকে দেড়-দুই হাজার কিলোমিটার দূরে চীনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নবজাতকদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান দুই সেবিকা।

ভূমিকম্পের এমন অসংখ্য মুহূর্ত ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে তীব্র কম্পনের মুহূর্তে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান ৩৬ বছর বয়সী এক মা।

সেই শিশুর মা বলেন, 'বাচ্চাটাকে বলছিলাম এখনই এসো না। কিন্তু ব্যথা বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল, হাসপাতাল ভবন থেকে আমাকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে নিতেও বিছানায় শুইয়ে দেয়া হয়। এর পরপরই আমার সন্তান জন্ম নেয়।'

ব্যাংককে ধসে পড়া নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে ১০ জনের বেশি মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও আটকে আছেন শতাধিক। সময় গড়াতে থাকায় ফিকে হয়ে আসছে তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা, তীব্র হচ্ছে ভবনের বাইরে অপেক্ষারত স্বজনদের হাহাকার। ধ্বংসস্তুপের ভেতরে ঢুকতে রোবট ব্যবহার করছেন উদ্ধারকর্মীরা।

উদ্ধারকর্মীদের মধ্যে একজন বলেন, '৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার ছাড়া আমরা জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করবো। জীবিতদের খুঁজতে কুকুরের সাহায্য নিচ্ছি।'

অন্য একজন বলেন, 'প্রশিক্ষণের সাথে সত্যিকারের পরিস্থিতির কোনো মিলই পাচ্ছি না। ধাতব ধারালো ধ্বংসস্তুপের কারণে খুব অল্প জায়গায় উদ্ধারকাজ চালাতে পারছি, ভেতরে ঢুকতে পারছি না।'

নিকটতম দুই প্রতিবেশী চীন-থাইল্যান্ড ছাড়াও শুক্রবারের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প টের পেয়েছে ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ দূরদূরান্তের কোটি মানুষ। আর মিয়ানমারে ভূমিকম্পের উৎসস্থল ঘিরে বিশাল অঞ্চল কেবলই ধ্বংসস্তুপ। ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রাজধানী নেইপিদোতে গতি নেই উদ্ধারকাজে, অভিযোগ বেঁচে যাওয়া মানুষের।

স্থানীয় একজন বলেন, 'রাজধানীর কেন্দ্রে, ব্যস্ততম এলাকায় দাঁড়িয়ে আছি। উদ্ধারকাজের গতি ভীষণ ধীর। তাও কয়েকটা ক্রেন শুধু আছে। কোনো পেশাদার উদ্ধারকারী দল নেই।'

শক্তিশালী ভূমিকম্পে নেইপিদোর অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় পরপর দুই রাত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন বাসিন্দারা। রাজধানীতেই যখন এ হাল, তখন দেশের সবচেয়ে বড় দুই শহর ইয়াঙ্গন আর মান্দালে থেকে শুরু করে দুর্গম এলাকার কী হাল, তা কল্পনা করাও কঠিন। দেশজুড়ে কমপক্ষে প্রায় তিন হাজার ভবন, ৩০টি সড়ক, সাতটি সেতু, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে বলে তথ্য সামরিক শাসনবিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভরনমেন্ট।

ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর চিরাচরিত গাম্ভীর্য ভেঙে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে বাধ্য হয়েছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শনের পর হাজারে হাজারে বিদেশি উদ্ধারকর্মীকে দুর্গত এলাকায় ঢোকার অনুমতিও দিয়েছে সামরিক শাসকগোষ্ঠী। চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে সহযোগিতা পাঠালেও ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতেই পৌঁছানোর পথ খুঁজে পাচ্ছে না সাহায্য সংস্থাগুলো।

প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, মিয়ানমারে ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলগুলোতে বাস প্রায় দুই কোটি মানুষের। জাতিসংঘ বলছে, ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটে উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরমধ্যেই গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্তপ্রায় দেশটিতে বিমান ও বোমা হামলাও অব্যাহত রেখেছে জান্তা, যা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে ক্ষোভ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এমন অবস্থায় ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলে সামরিক অভিযান দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে নির্বাসিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভরনমেন্ট।

বিশেষজ্ঞের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ৩শ' পারমাণবিক বোমার সমপরিমাণ শক্তি নির্গত হয়েছে মিয়ানমারের এক ভূমিকম্পে। দু'দিন ধরে দফায় দফায় আফটারশক তো আছেই। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের আভাস, দেশটিতে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এতসব দুঃসংবাদের মধ্যে মান্দালের ধ্বংসস্তুপ থেকে ৩০ ঘণ্টা পর এক নারীকে জীবিত উদ্ধারের খবরে আশায় বুক বাঁধছেন নিখোঁজ মানুষের স্বজনরা।

এসএস