দ্বিতীয়বার টাইফুনের আঘাতে ফিলিপিন্সে ১৯ মৃত্যু

পানিবন্দি ফিলিপিন্সের মানুষ
পানিবন্দি ফিলিপিন্সের মানুষ | ছবি: সংগৃহীত
0

ফিলিপিন্স ভূখণ্ডে দ্বিতীয়বার আঘাত হানলো টাইফুন কো-মে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৯ জনে, অনেকে নিখোঁজ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রাজধানী ম্যানিলা ও ৩৪টি প্রদেশের সব স্কুল ও সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে প্রায় ৭০টি ফ্লাইট। এছাড়াও তীব্র ঝড়-বৃষ্টির কবলে চীন-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। অন্যদিকে দাবানলে কাবু তুরস্ক, সাইপ্রাস, আলবেনিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশ। আগুন নেভাতে গিয়ে তুরস্কে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ১২ ফায়ার সার্ভিস কর্মীর।

প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২০টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের কবলে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপিন্স। ব্যতিক্রম নয় চলতি বছরও। গেলো সপ্তাহেও প্রবল ঝড়বৃষ্টি আর বন্যায় বিপর্যয়ের কবলে পড়ে ১৪ লাখের বেশি মানুষ। সপ্তাহ না পেরোতেই টাইফুন কো-মে’র প্রভাবে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে নতুন করে।

স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে দেশের উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয়বার আঘাত হানে কো-মে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধস আর গৃহহীন লাখো মানুষ, ঘটছে প্রাণহানিও। ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত আর ব্যাপক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রাজধানী ম্যানিলা ও ৩৪টি প্রদেশের সব স্কুল ও সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। বাতিল হচ্ছে বিপুলসংখ্যক ফ্লাইট। কেবল পাঙ্গাসিনান অঞ্চলেই বন্যাকবলিত দুই লাখ ৬৭ হাজার পরিবার। ফিলিপিন্সে এমন পরিস্থিতি ‘নিউ নরমাল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস।

প্রতিবেশি চীনে চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিদ্যমান। নতুন করে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশে ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং তীব্র যানজটও দেখা দেয়। কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণের পর এমন পরিস্থিতি অঞ্চলটিতে। ভিয়েতনামে টাইফুন উইফর আঘাতে উত্তর ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে চারশোর বেশি বাড়িঘর, ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ হেক্টরের বেশি ধানি জমি। একই অঞ্চলে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর দানা বাঁধছে জোড়া হিট ডোম, কাছেই সৃষ্টি হচ্ছে তিনটি টাইফুন।

এই যখন অবস্থা, তখন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে একদিকে বন্যা; অন্যদিকে তীব্র দাবদাহ। একটানা ভারী বৃষ্টির পর নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের রুইদোসো নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। স্বাভাবিকের চেয়ে সাড়ে ১২ ফুট উঁচুতে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করলে জরুরি সতর্কতা জারি করে প্রশাসন। অন্যদিকে, গ্রীষ্মের খরতাপে বিপর্যস্ত নিউ ইয়র্ক। দক্ষিণাঞ্চলে ‘হিট ডোম’ অগ্রসর হতে থাকায় গরমের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা।

গ্রীষ্মের খরতাপ আর শুষ্ক বাতাসে একাধারে আগুন জ্বলছে তুরস্ক, সাইপ্রাস, আলবেনিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশে। তুরস্কে বেড়েছে প্রাণহানি। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টানা চতুর্থ দিনের আগুনে বিপর্যস্ত বিলেশিক প্রদেশের বাসিন্দারা। আগুনের আঁচ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন প্রদেশে খালি করে ফেলা হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।

তুরস্কের একজন বলেন, ‘আগুনের সাথে লড়াই করতে হচ্ছে আমাদের। বিশাল এক অগ্নিকুণ্ড তৈরি হয়েছে। ভেবেছিলাম যে আমাদের গ্রাম পর্যন্ত আগুন ছড়াবে না। কিন্তু সে ভাবনা ভুল ছিল।’

অন্য একজন বলেন, ‘জীবনে কখনো এতো বড় দাবানল দেখিনি। তিন দিক থেকে আমাদের গ্রামে আগুন ধেয়ে আসছে।’

অন্যদিকে, চলতি গ্রীষ্মে টানা তৃতীয় দাবদাহের কবলে গ্রিস। তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে বলে আভাস আবহাওয়া বিভাগের।

এসএস