মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়লো ভারতের উত্তরাঞ্চল। গেল ৫ আগস্ট ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ভারি বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় হতাহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। তীব্র বেগে ধেয়ে পানির সঙ্গে পাথর ও কাদার স্রোতের নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় উত্তরকাশীর ধরালি গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভেসে গেছে বহু ঘরবাড়ি, হোটেল ও স্থাপনা। রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এবার একই ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়লো ভারতের জম্মু-কাশ্মীর। উপত্যকার চাশোতি গ্রামে মেঘ ভেঙে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় প্রাণহানি অর্ধশত ছাড়িয়েছে। এখনো নিখোঁজ বহু মানুষ। জীবিত উদ্ধার করা হয় ৩ শতাধিক বাসিন্দাকে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় বেশ কয়েকজন ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত চণ্ডীর মণ্ডপে যেতে চাশোতি গ্রাম পর্যন্তই গাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এখানে জড়ো হয়ে পূণ্যার্থীরা পায়ে হেটে মন্দিরে উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে হুট করেই হড়কা বানে ভাসিয়ে নিয়ে যায় চাশোতি গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তখন গ্রামটিতে হাজারের বেশি পূণ্যার্থী ছিলেন। এ ঘটনার পরই বাতিল করা হয় বার্ষিক তীর্থযাত্রা। পাশাপাশি স্থগিত করা হয় ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সব আয়োজন।
জম্মু-কাশ্মীরের বিধায়ক সুনীল কুমার শর্মা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত চাশোতি গ্রাম পর্যন্তই সবশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা আছে। এখানে এসে সবাই বিরতি নেয়। এরপর তীর্থযাত্রীরা এখান থেকে মোটরসাইকেল বা পায়ে হেঁটে যায়। ভ্রমণকারীদের শেষ গন্তব্যস্থল এই চাশতি গ্রাম। যা এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে।’
কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় আবারও প্রবল বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। সেই সঙ্গে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী দুপুরের খাবারের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে আকস্মিক বন্যায় ভেসে যায় সবাই।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনেই হুট করে মেঘ ভেঙে তীব্র বেগে পাথর ও কাদা মিশ্রিত বান ভেসে আসে।’
অন্য একজন বলেন, ‘দুই মিনিটের মধ্যেই সবকিছু ভাসিয়ে নিলো। কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমার মেয়েকে এখনও খুঁজে পাইনি।’
দুর্যোগ মোকাবিলায় উদ্ধার অভিযানে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা অংশ নিয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে দেড় শতাধিক উদ্ধারকর্মীকে। সব ধরনের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারী বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লির জনজীবন। দেয়াল ধসে ও গাছ উপড়ে পড়ে হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তলিয়ে গেছে শহরের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ও দোকানপাট। বিপাকে পড়েছেন দিল্লির বাসিন্দারা।
দিল্লির স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে আছে। অফিস যেতে পারছি না। এমন দিনে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর।’
অন্য একজন বলেন, ‘এই অবস্থার উন্নতিতে স্থানীয় প্রশাসন তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বৃষ্টিতে কর্মস্থলে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।’
স্থানীয় একজন বলেন, ‘গেল ১০-১২ বছর ধরেই বৃষ্টি হলে বন্যা দেখা দেয় দিল্লিতে। সামান্য বৃষ্টিতে সব ড্রেন উপচে ডুবে যায় রাস্তাঘাট।’
ভারতের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭৫ শতাংশই হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্বল উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যয়ের মাত্রা তীব্র হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে দেশটি বন্যা ও জলাবদ্ধতা এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।