১৫৫ দিনের ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই। আহত সাড়ে ৭২ হাজারের বেশি। নারকীয় আগ্রাসনের কবলে আহত, ক্ষুধার্ত, আশ্রয়হীন অবস্থায় বেঁচে থাকা লাখ লাখ মানুষের অপেক্ষা কেবল একটু খাবারের জন্য।
গাজার যুদ্ধে মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন এতোটাই জটিল হচ্ছে যে জাতিসংঘ বলছে, পৌনে ছয় লাখের বেশি মানুষ, উপত্যকার মোট বাসিন্দার চার ভাগের এক ভাগই ভুগছে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সরবরাহে নতুন স্থলপথ উন্মুক্ত করতে এবং আরও সীমান্ত ক্রসিং খুলতে পশ্চিমা দেশগুলো চাপ দিলেও তা খুব একটা আমলে নিচ্ছে না ইসরাইল।
গাজার চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. তাহের আহমেদ বলেন, 'স্রেফ বিমান থেকে বোমা ফেলা, কিছু বাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়া, মানুষের আশ্রয় হারানো পর্যন্ত কিছু সীমিত নেই। গাজার মানুষের জীবন সবদিক থেকে থমকে গেছে। খাবারের ভয়াবহ সংকট। অনাহার আর পানিশূন্যতায় ২০ জনের বেশি শিশুর মৃত্যুর খবর তো সবাই জেনেছেই। আশপাশে তাকালেই দেখবেন খাবারের খোঁজে কীভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত মানুষ।'
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সহজ করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মার্কিন যুদ্ধজাহাজ। গাজা উপকূলে অস্থায়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে শনিবার ভার্জিনিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি ছাড়ে জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক এস বেসন জাহাজটি। এক হাজার সেনা সদস্য বন্দর নির্মাণের কাজে হাত লাগালেও গাজার উপকূলে ভিড়বে না কেউ।
গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ অনিবার্য এবং শিশুরা অনাহারে মরছে বলে জাতিসংঘের হুঁশিয়ারির পরই এমন তোড়জোড় যুক্তরাষ্ট্রের। স্থল ও আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহেও বাড়ছে বিপদ। ত্রাণবহর লক্ষ্য করে গোলাগুলি ও লুটপাটের পর কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। প্যারাশুটে ত্রুটির কারণে বিমান থেকে ফেলা ত্রাণের আঘাতে দু'দিন আগেই প্রাণ যায় পাঁচ ফিলিস্তিনির। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণের জন্য অস্থায়ী বন্দর নির্মাণে কমপক্ষে ৬০ দিন সময় দরকার বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানালেও দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, এতো সময় নেই ফিলিস্তিনিদের কাছে।
এদিকে মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের পাঠানো ২০০ টন ত্রাণের খাবার নিয়ে সাইপ্রাস থেকে আসা একটি স্প্যানিশ জাহাজ রোববারও রয়েছে ইসরাইলের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। ওপেন আর্মস নামের জাহাজটি সোমবারের আগে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে পারবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
ইসরাইল সেনাবাহিনী মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছাতে একটি সাময়িক ভাসমান পোতাশ্রয় তৈরির কাজে আমরা সহযোগিতা করছি। ইসরাইলের পূর্ণ তত্ত্বাবধান শেষে ত্রাণ ঢুকতে দেয়া হবে।'
ত্রাণ পাঠানো সহজ করতে গাজা থেকে ইউরোপের নিকটতম দেশ সাইপ্রাস হয়ে উপত্যকা পর্যন্ত একটি নতুন সমুদ্র পথ চালু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে সমুদ্র পথে পাঠানো ত্রাণ কীভাবে নিরাপদে তীরে পৌঁছাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গাজায় কোন চালু বন্দর নেই এবং বড় নৌযানের নোঙর ফেলার মতো যথেষ্ট গভীরও নয় উপকূল।
ওপেন আর্মস জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গন্তব্যস্থলে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য একটি অস্থায়ী ঘাট নির্মাণ করছে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন। গোপন রাখা হয়েছে গন্তব্যস্থলের নাম।





