ক্ষুধায় কাতর সন্তানদের সান্ত্বনা দিতে খাবার তৈরির মিথ্যা অভিনয় করে চলেছেন মা। ঘরে চাল না থাকায় পাখির খাবার থেকে পাথর আলাদা করছেন তিনি। সন্তানরা ভাবছে আর কিছুক্ষণ পরই হয়তো তাদের জন্য প্রস্তুত করা হবে খাবার।
এরকম এক মা বলেন, ‘পানি নেই। খাবার নেই। কোনো ধরনের ত্রাণ নেই। পাখির খাবার থেকে পাথর আলাদা করছি। কোনো ধরনের খাবার না থাকায় মনে হচ্ছে পাথর খেয়ে বাঁচতে হবে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাচ্চারা সারাক্ষণ কান্না করছে। তাদের শান্ত রাখতেই খাবার তৈরির অভিনয় করে যাচ্ছি।’
একদিকে যখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশুরা, অন্যদিকে তখন খাবারের অভাবে প্রাপ্ত বয়স্করাও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কোনো ধরনের শুকনো রুটি বা ভাতের ব্যবস্থা করতে পারছের না তারা। বাজারে সবজির দরও হাতের নাগালের বাইরে। পরিস্থিতির যেন কোনোই উন্নতি নেই।
গাজার স্থানীয় একজন বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ক্ষুধার কষ্টে হাঁটতে পারছি না। কোনো ধরনের ওষুধও নেই এখানে। চাল, আটা, সবজি কিছুই নেই। যা আছে তার দামও অনেক। একটা টমেটোর দাম পাঁচ শেকেল। পেঁয়াজের দামও অনেক বেশি।’
গত প্রায় দুই মাস ধরে গাজা উপত্যকায় কোনো ধরনের খাবার ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরাইল। এতে চরম মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে গাজার লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। যেখানে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে শিশুরা। এরমধ্যেই ৭০ হাজার শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিশু ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাবে বলেও আশঙ্কা জাতিসংঘের।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় খাবার সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার সরবরাহ করবো আমরা। তাদের সহায়তা করতে যাচ্ছি। হামাসের জন্য গাজার পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে। তবে গাজার সাধারণ মানুষকে সাহায্য করবো।’
তবে গাজায় খাদ্য সরবরাহের নামে যে ইসরাইলি পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছে, তা মোটেও কার্যকর হবে না বলে দাবি জাতিসংঘের।
গাজায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো বলেন, ‘গাজায় মাত্র একটি কেন্দ্র থেকে ত্রাণ সহায়তা দিতে চাইছে ইসরাইল। এতে অন্যান্য সহায়তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। গাজায় মানবাধিকার পুরোপুরি লঙ্ঘন করছে ইসরাইল।’
ইউনিসেফ বলছে, গেল চার মাসে কেবল অপুষ্টিজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯ হাজার শিশু।