৪০ বছর বয়সী থাই যুবক কোমসান প্রাচ্য। কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) গোলাবর্ষণ শুরুর পর তার বাচ্চাদের স্কুল থেকে ফোন আসে। পরে স্ত্রী, ১৪ বছর বয়সী মেয়ে, নয় বছর বয়সী ছেলে এবং তাদের ছেলের বন্ধুকে আনতে ছুটে যান স্কুলে। ফেরার পথে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে যাত্রাবিরতি দেন।
তখন গাড়ি থেকে নেমে পেট্রোল পাম্পে থাকা দোকানে খাবার কিনতে যায় কোমসানের পরিবার। ঠিক তখনই একটি কামানের গোলা আঘাত হানলে, পাম্পটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় গোটা পরিবারের। প্রিয়জন হারানোর বেদনা নিয়ে এভাবেই সংঘাতের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন থাই যুবক। মোবাইলে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের ছবিই এখন তার একমাত্র অবলম্বন। ভয়াবহ এই সংঘাতে কোমসানের পরিবারের মতো আরও অনেক বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতির জোর দাবি পরিবার হারা এই যুবকের।
কোমসান প্রাচ্য বলেন, ‘আমি চাই দুই দেশই এই ভয়াবহতার কথা ভাবুক। যুদ্ধ কারও জন্য ভালো নয়। তাই উভয়েরই একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলা উচিত এবং এটি বন্ধ করা উচিত। যুদ্ধ ক্ষতি ছাড়া মঙ্গল কিছু বয়ে আনতে পারে না।’
এমন পরিস্থিতির মধ্যে দুই দেশের উত্তেজনা কমানোর বার্তা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উভয় দেশের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলে ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় রাজি হয়েছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড।
যুদ্ধবিরতিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়ে ব্যাংকক-নমপেন আলাদা বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের জন্য তাকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানায়। যদিও এরপরও রাতভর সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় কম্বোডিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতির আশ্বাসের ওপর জোর দিয়েছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই।
এ অবস্থায় সীমান্তের উভয় পাশের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি হওয়ায় একে কেউ কেউ সুখবর হিসেবে দেখলেও, ট্রাম্পের ফোনের পর গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় আতঙ্ক এখনও তারা করছে অনেককে। তাই স্থায়ী সমাধান চান থাই-কম্বোডিয়ান নাগরিকরা।
কম্বোডিয়ার একজন বলেন, ‘একজন কম্বোডিয়ান হিসেবে আমি মনে করি, সংঘাত পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে যাওয়ার আগেই যদি উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় তা সবার জন্য ভালো হবে।’
থাইল্যান্ডের একজন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানাবো যাতে উভয়পক্ষকেই আলোচনায় টেবিলে নিয়ে সংঘাত বন্ধের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেন।’
অন্য একজন বলেন, ‘আমরা চাই ট্রাম্প এটি নিশ্চিত করুক, যাতে ভবিষ্যতে আর কখনও সীমান্ত বিরোধের ঘটনা আর না ফিরে আসে।’
তিন দিনের এই সংঘাতে উভয় দেশেই বহু হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন কম্বোডিয়ার অন্তত ৪০ হাজার এবং থাইল্যান্ডের প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা। যাদের অনেকে এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে সময় কাটাচ্ছেন।