জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের খবর তুলে ধরাই কাল হলো সাংবাদিক আনাস আল-শরিফসহ আল-জাজিরার পাঁচ কর্মীর। আল-শিফা হাসপাতালের পাশে তাঁবুতে হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
এ ঘটনাকে সাংবাদিকতার ওপর পরিকল্পিত ও প্রকাশ্য হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে আল-জাজিরা। ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনে থাকা জাতিসংঘ মিশন- গণহত্যা ও ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের দৃশ্য তুলে ধরার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড। সাংবাদিক হত্যায় উদ্বেগ ও সমবেদনা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় প্রেসক্লাব। নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। ইসরাইলের দাবি, আনাস আল-শরিফ হামাসের একটি সশস্ত্র সেলের প্রধান ছিলেন।
এদিকে ত্রাণ আনতে যাওয়া ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদেরও প্রতিদিন হত্যা করছে ইসরাইল। চরম পর্যায় পৌঁছেছে মানবিক সংকট। সীমান্ত বন্ধ থাকায় বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে ত্রাণ। দ্রুত ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে রেহাই পেতে চান ফিলিস্তিনিরা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘ভেতরে পরিস্থিতি কঠিন। অনেকে হতাহত হচ্ছেন। খাবার আর জীবনের নিরাপত্তা চাই। ইসরাইলি আগ্রাসনে আমরা ক্লান্ত।’
অন্য একজন বলেন, ‘সহায়তা আনতে গেলে প্রতিদিই গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে অনেকের প্রাণ যচ্ছে; এটি প্রকাশ্যে হচ্ছে, লুকানোর কিছু নেই।’
এর মধ্যেও গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনাই, দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে ভাল উপায় বলে মন্তব্য করলেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় থাকা হামাসের অবশিষ্ট দুটি শক্ত ঘাঁটি এবং কেন্দ্রীয় শিবির ভেঙে ফেলার জন্য আইডিএফকে নির্দেশ দিয়েছে। এটি যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম উপায়। এটি ছাড়া দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার সম্ভব না।’
আরও পড়ুন:
রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনে ইসরাইলি আগ্রাসন ও গাজা দখলে সাম্প্রতিক পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘের চীনের প্রতিনিধি ফু কং বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই গাজা দখলের যেকোনো প্রচেষ্টার দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করতে হবে। গাজা দখলে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক অনুমোদন চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ। অবিলম্বে এই বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানাই।’
জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি জেমস কারিউকি বলেন, ‘গাজায় শিশুরা অনাহারে ভুগছে। খাবার আনতে গিয়ে শত শত বেসামরিক মানুষ লোক নিহত হয়েছে। এই অমানবিকতাকে সমর্থন করা যায় না। এ অবস্থায় আমারা ইসরাইলকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য সরবরাহের উপর স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক।’
আরও পড়ুন:
জরুরি অধিবেশন ইসরাইলের হয়ে সাফাই গাইলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি ডরোথি শিয়া। বলেন, ইসরাইলকে নিয়ে নিন্দা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে হামাসকে উৎসাহিত করার কারণে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে গেছে।
জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি ডরোথি শিয়া বলেন, ‘ইসরাইল এমনি এমনি সামরিক অভিযান এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কয়েক মাস ধরে হামাসের একগুঁয়েমি আচরণে বাধ্য হয়েছে। হামাস যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং জিম্মিদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’
গাজায় ৬৭০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসেন এখন পর্যন্ত প্রাণহানি ৬১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। অনাহার-অপুষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২ শ’ ছাড়িয়েছে। যার শতাধিকই শিশু।