গেল বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন টেসলা ও স্পেসএক্স নির্বাহী ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন ক্যাম্পেইন অন্যতম সমর্থক, পৃষ্ঠপোষক হয়ে কখনও মঞ্চে নেচেছেন, কখনও আবার রিপাবলিকান সমর্থকদের বিলিয়েছেন হাজার হাজার ডলার।
সরকার গঠনের পর ধনকুবের মাস্ককে উপদেষ্টার পদে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। তার জন্য খোলা হয় সরকারি সক্ষমতা বিভাগ নামে আলাদা দপ্তর। এরপর ট্রাম্প আর মাস্ক মিলে শুরু করেন কর্মী ছাঁটাই অভিযান। পেন্টাগন থেকে হেলথ ডিপার্টমেন্ট- আইটি থেকে আমলা- কাউকেই ছাড় দেননি এই মানিক জোড়। আর ইলন মাস্ক প্রতিশ্রুতিও দেন এই অভিযানের ভিত্তিতে ফেডারেল সরকারের কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করে দেখাবেন তিনি।
কিন্তু মাস্কের ঔদ্ধত্য আর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে হোয়াইট হাউজের ভেতরে ও বাইরে। রিপাবলিকানদেরও বিরাগভাজন হতে দেখা গেছে তাকে।
এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটেছে গেল সপ্তাহে। ১২৯ দিন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্মেন্ট এফিশিয়েন্সির উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব পালনের পর সেখান থেকে সরে গেছেন এই টেক বিলিওনেয়ার। মাস্কের বিদায়ও হয়েছে আড়ম্বরের সঙ্গেই। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাছ থেকে প্রশংসা আর শুভেচ্ছা স্মারক সোনার চাবি নিয়ে ওভাল অফিস ছেড়েছেন ট্রাম্প।
কিন্তু দায়িত্ব ছেড়ে জন্ম দিয়েছেন নতুন গুঞ্জনের। দায়িত্ব ছাড়ার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই প্রথমবারের মতো পাবলিক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারি ব্যয় ও কর সংক্রান্ত বাজেট বিলকে জঘন্য পরিকল্পনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইলন মাস্ক। পাশাপাশি যে সব আইনপ্রণেতা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন তারা জেনেশুনে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন অভিযোগও করেছেন তিনি।
গেলে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয় ট্রাম্পের 'সিগনেচার মুভ' খ্যাত এই বাজেট বিল। নতুন বিলের আওতায় কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড়, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত ঋণ নিতে পারবে ফেডারেল সরকার।
যদিও এর প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভালোভাবেই ইলন মাস্কের অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছে। সোজা কথায় মাস্কের এই মন্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল তা আমলে নিচ্ছেন না হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি। আর ইলন মাস্কের এই বক্তব্যকে ট্রাম্প বিদ্বেষ হিসেবে মানতে রাজি নন বিশ্লেষকরাও। তাদের দাবি, এই বিলের অনেক ত্রুটিপূর্ণ দিক আছে। ফলে এর সমালোচনা করার অধিকার যে কোনো নাগরিকেরই আছে।
যদিও কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, দায়িত্ব নেয়ার পর অসংখ্যবার রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই শিবিরের কাছ থেকেই গালমন্দ শুনতে হয়েছে মাস্ককে। তাই এবার দায়িত্ব ছেড়ে প্রশাসনের দুর্বলতার নিয়ে সরব হয়েছেন সাবেক এই উপদেষ্টা।