ভূমিকম্প কী, কেন হয়; কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে সামনের সারিতে বাংলাদেশ, ধসবে রাজধানীর বহু ভবন | এখন টিভি
1

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূমিকম্পের (Earthquake) ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। এ আকস্মিক দুর্যোগ মানব ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরে থাকা বিশাল টেকটোনিক প্লেটগুলোর (Tectonic Plates) সঞ্চালন এবং ফল্ট লাইন (Fault Lines) বরাবর সঞ্চিত শক্তির আকস্মিক নির্গমনই হলো ভূমিকম্পের কারণ (Causes of Earthquake)। বাংলাদেশসহ অনেক অঞ্চল উচ্চ সিসমিক জোনে (Seismic Zone) অবস্থিত হওয়ায় এ প্রাকৃতিক বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ভূমিকম্পের পূর্বাভাস (Earthquake Prediction) দেয়া সম্ভব নয়, তাই জীবন ও সম্পদ রক্ষার একমাত্র উপায় হলো ভূমিকম্প সতর্কতা (Earthquake Preparedness)। সঠিক প্রস্তুতি, বিশেষ করে ‘ড্রপ, কভার, অ্যান্ড হোল্ড অন’ (Drop, Cover, Hold On) কৌশল জানা থাকলে, দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে কমানো সম্ভব। এ ফিচারে আমরা জানবো, ভূমিকম্প কী, কেন হয় এবং মোকাবিলায় আমাদের করণীয় (Earthquake Safety Tips) কী কী।

ভূমিকম্প কী - What is an Earthquake?

ভূমিকম্প হলো প্রধানত টেকটোনিক প্লেটগুলোর (Tectonic Plates) সঞ্চালনের কারণে ঘটে যাওয়া একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। পৃথিবীর ভূত্বক (Crust) কয়েকটি বিশাল খণ্ড বা প্লেটে বিভক্ত। যখন এ প্লেটগুলো একে অপরের সাথে সংঘর্ষ হয়, দূরে সরে যায় বা একে অপরের গা ঘেঁষে চলতে থাকে, তখন তাদের সংযোগস্থল বা ফল্ট লাইন (Fault Lines) বরাবর বিপুল পরিমাণ চাপ বা শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে।

এ আকস্মিক এবং দ্রুত শক্তি নির্গমনই পৃথিবীর পৃষ্ঠে ঢেউ তৈরি করে, যা আমরা কম্পন হিসেবে অনুভব করি। সহজ কথায়, ভূগর্ভের অভ্যন্তরে হঠাৎ শক্তি নির্গত হওয়ার কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠ কেঁপে ওঠাকেই ভূমিকম্প (What is an Earthquake) বলে।

ভূমিকম্প অনুভূত | ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প কেন হয়? (Why Earthquakes Happen)

ভূমিকম্প কেন হয়, তা বুঝতে হলে আমাদের পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। এর প্রধান কারণটি হলো টেকটোনিক প্লেটগুলোর (Tectonic Plates) গতিশীলতা। ভূমিকম্প ঘটার মূল কারণগুলোকে নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

পৃথিবীর বাইরের স্তর, অর্থাৎ ভূত্বক (Earth's Crust) টি স্থির নয়। এটি অসংখ্য বিশাল খণ্ড বা প্লেটে বিভক্ত, যাদের বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। এই প্লেটগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমার ওপর ভেসে থাকে এবং বছরে কয়েক সেন্টিমিটার হারে ধীরে ধীরে চলাচল করে। যখন দুটি প্লেট একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় (সংঘর্ষ), বা একে অপরের থেকে দূরে সরে যায় (অপসরণ), অথবা একে অপরের গা ঘেঁষে চলতে থাকে, তখন তাদের সংযোগস্থল বা ফল্ট লাইন (Fault Lines) বরাবর প্রচণ্ড চাপ (Stress) সৃষ্টি হয়।

এ চাপ দীর্ঘদিন ধরে ফল্ট লাইন বরাবর জমা হতে থাকে। ফল্ট লাইনগুলো তখন পর্যন্ত প্লেটগুলোকে আটকে রাখে। যখন এই সঞ্চয়কৃত চাপ (Accumulated Strain) প্লেটগুলোর আটকে থাকার ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন ফল্ট লাইন বরাবর হঠাৎ প্লেটগুলো সশব্দে ভেঙে যায় বা সরে যায়। এই আকস্মিক গতির ফলে বিপুল পরিমাণ শক্তি (Energy) ভূমিকম্প তরঙ্গ বা সিসমিক ওয়েভ (Seismic Waves) আকারে ভূ-অভ্যন্তরে নির্গত হয়। এই তরঙ্গ যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়, তখনই আমরা কম্পন অনুভব করি, যা হলো ভূমিকম্প

আরও পড়ুন:

কিছু ছোট আকারের ভূমিকম্প (Minor Earthquakes) অন্যান্য কারণেও হতে পারে: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের (Volcanic Activity) সময় বা তার আগে ভূ-অভ্যন্তরে চাপ বাড়লে কম্পন সৃষ্টি হতে পারে। আবার বড় বাঁধ নির্মাণ, ভূগর্ভে তরল বর্জ্য ইনজেক্ট করা, বা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা (Underground Nuclear Tests)-ও অনেক সময় ছোট আকারের কম্পনের কারণ হতে পারে।

ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব বা স্থায়ীত্বকাল (Duration of an Earthquake)

ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব বা স্থায়ীত্বকাল নির্ভর করে ভূমিকম্পের তীব্রতা, কেন্দ্র এবং শক্তির মুক্তির ধরনের ওপর। অধিকাংশ ভূমিকম্প মাত্র কয়েক সেকেন্ড (Few Seconds) স্থায়ী হয়। প্রায়শই এটি ১০ সেকেন্ডের কম হয়। যদি ভূমিকম্পের মাত্রা বেশি হয় (যেমন ৬.০ বা তার বেশি), তবে এটি ৩০ সেকেন্ড থেকে ৬০ সেকেন্ড (30 to 60 Seconds) পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে এটি এক মিনিটের বেশিও স্থায়ী হতে পারে, তবে তা খুবই অস্বাভাবিক। তবে, স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করে মূল কম্পন বা মেইন শক (Main Shock)। মেইন শকের পরে ছোট ছোট যে কম্পনগুলো হয়, সেগুলোকে আফটারশক (Aftershocks) বলা হয়, যা কয়েক ঘণ্টা, দিন, এমনকি মাস ধরেও চলতে পারে।

ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা: যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে ৭+ মাত্রার

দেশের প্রধান চারটি অঞ্চল—চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা—বর্তমানে ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে (High Earthquake Risk) রয়েছে। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (Fire Service and Civil Defence Bangladesh) এই জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে, যা বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মতে, দেশের ভূ-ত্বকীয় গঠন, সক্রিয় ফল্ট লাইন (Fault Lines) এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূমিকম্পের দীর্ঘ ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেকোনো সময় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প (7+ Magnitude Earthquake) আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মাত্রার ভূমিকম্প ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে।

কেন এই অঞ্চলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ?

সংস্থাটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থান এবং সিসমিক ডেটার (Seismic Data) ভিত্তিতে এই অঞ্চলগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (High-Risk Zones) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে:

চট্টগ্রাম ও সিলেট: এই অঞ্চলগুলো প্রধান সক্রিয় ফল্ট লাইনের (Active Fault Lines) কাছাকাছি অবস্থিত।

ময়মনসিংহ ও ঢাকা: ঘনবসতিপূর্ণ এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এই অঞ্চলগুলোতে ভূমিকম্পের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে।

একটি-অপরটির গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ঢাকার দালানগুলোর ছবি |ছবি: এপি

এই সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সব পর্যায়ে পূর্বপ্রস্তুতি ও সচেতনতা (Earthquake Preparedness and Awareness) তৈরির পরামর্শ দিয়েছে ও ভূমিকম্পের সময় করণীয় (Earthquake Safety Tips) বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা (Awareness) বাড়ানো।

আরও পড়ুন:

৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ!

দেশের ভূ-প্রকৃতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ (Geologist) অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তাঁর মতে, বাংলাদেশ আপাতদৃষ্টিতে কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ মনে হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে এটি খুব উপরে অবস্থান করছে। ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে (Indian-Burma Plate Boundary) জমা হওয়া বিপুল পরিমাণ শক্তির কারণে এই অঞ্চলে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা রয়েছে।এটা আগামীকালও হতে পারে, আগামী ৫০ বছর পরেও হতে পারে। কখন হবে সেটা আমরা বলতে পারি না, তবে যেটা হবে সেটা খুব মারাত্মক হবে।

তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে যে বিশাল পরিমাণ শক্তি বর্তমানে সঞ্চিত হয়ে আছে, সেই শক্তি যদি একবার সম্পূর্ণভাবে নির্গত হয়, তবে তা ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প (8.2-9 Magnitude Earthquake) সৃষ্টি করতে পারে। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্পগুলো (Subduction Zone Earthquakes) ভয়ঙ্কর হয়।

গুগল আর্থকুয়েক |ছবি: অ্যানালাইটিকস ইনসাইট

ভূমিকম্প চলাকালীন সর্তকতা (During the Earthquake)

আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী, কম্পন শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে তাৎক্ষণিক তিনটি পদক্ষেপ নিন, যা 'ড্রপ, কভার, অ্যান্ড হোল্ড অন' নামে পরিচিত:

ড্রপ (Drop): সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতে বসে পড়ুন।

কভার (Cover): মাথা ও ঘাড় রক্ষার জন্য মজবুত কোনো টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন।

হোল্ড অন (Hold On): কম্পন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া বস্তুটি শক্ত করে ধরে রাখুন।

বাইরে থাকলে: উঁচু ভবন, গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে খোলা জায়গায় চলে যান। গাড়ির ভেতর থাকলে গাড়ি থামিয়ে ভেতরেই থাকুন।

আরও পড়ুন:

ভূমিকম্প হলে দ্রুত যা করবেন-What to do immediately in case of an earthquake

ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত নড়াচড়া বা আতঙ্কিত আচরণ আহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

আপনার অবস্থানকরণীয়বর্জনীয়
ঘরে বা ভবনেইটের গাঁথুনি দেওয়া পাকা ঘর হলে ঘরের কোণে; কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিন। বালিশ বা শক্ত বস্তু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান নেবেন না।
রান্নাঘরেগ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন।গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের খুব কাছে অবস্থান করা।
শিক্ষা বা প্রতিষ্ঠানেস্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।বের হওয়ার জন্য ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি করা।
উঁচু ভবনেসম্ভব না হলে উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামার চেষ্টা না করে কম্পন থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।এলিভেটর/লিফট ব্যবহার করা এবং তাড়াহুড়ো করে লাফ দেওয়া।
বাইরেফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন। গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি, পদচারী-সেতু ও উড়ালসড়ক থেকে দূরে থাকুন।
গাড়িতেগাড়ি বন্ধ করে খোলা জায়গায় (উড়ালসড়ক, খুঁটি থেকে দূরে) থামান এবং গাড়ির ভেতরেই অবস্থান নিন।গাড়ি থেকে বাইরে বের হলে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি।

ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে কী করবেন এবং পূর্বপ্রস্তুতি কেমন হবে?

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (Fire Service and Civil Defence) ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দুটি মূল বিষয়ে জোর দিয়েছে: পূর্বপ্রস্তুতি এবং আটকে পড়ার পরবর্তী করণীয়।

ধ্বংসস্তূপ বা ভবনে আটকে পড়লে করণীয় (If Trapped in Rubble)

ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়লে জীবন বাঁচাতে দ্রুত এই কৌশলগুলো অবলম্বন করুন:

পরিস্থিতিকরণীয়বর্জনীয়
আটকে পড়লেকম নড়াচড়া: বিম, দেয়াল বা কংক্রিটের নিচে শরীরের কোনো অংশ চাপা পড়লে, বের হওয়ার সুযোগ না থাকলে অতিরিক্ত নড়াচড়া করা যাবে না। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করা।
যোগাযোগশব্দ করুন: চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করুন (কারণ মুখে ধুলাবালি ঢুকতে পারে)। এর বদলে পাইপে বা দেয়ালে বাড়ি দিয়ে অথবা মুখে শিস বাজিয়ে উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন।ম্যাচ বা লাইটার জ্বালানো যাবে না। ধ্বংসস্তূপে গ্যাস লিক হয়ে থাকলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
শ্বাস-প্রশ্বাসসম্ভব হলে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধ্বংসস্তূপের ক্ষতিকারক ধুলাবালি শ্বাসনালিতে না ঢোকে।শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজ করবেন না।

ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি (Earthquake Preparedness)

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভূমিকম্পের আগে যে কাঠামোগত এবং ব্যক্তিগত সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছে, তা নিম্নরূপ:

ক. কাঠামোগত নিরাপত্তা ও সংস্কার

বিল্ডিং কোড অনুসরণ: বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (BNBC 2020) অনুযায়ী ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন: ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

অগ্নি প্রতিরোধ: বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Fire Prevention System) জোরদার করা।

ইউটিলিটি লাইন: ইউটিলিটি সার্ভিসের (যেমন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ) লাইনগুলো যেন সঠিক ও ত্রুটিমুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করা।

খ. প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি

নিয়মিত মহড়া: ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত মহড়া অনুশীলন (Regular Drills) ও প্রচারের ব্যবস্থা করা।

ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ: দুর্যোগকালীন সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ (Volunteer Training) গ্রহণ করা।

গ. জরুরি সামগ্রী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

জরুরি নম্বর সংরক্ষণ: ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, হাসপাতাল ও অন্যান্য জরুরি নম্বরসমূহ ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং ভবন/স্থাপনার দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখা।

ভূমিকম্পের পর উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা |ছবি: এপি

জরুরি কিট (Emergency Kit): বাসা-বাড়িতে একটি নির্ধারিত স্থানে জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি সংরক্ষণ করা। এই কিটের মধ্যে যা যা থাকা আবশ্যক:

  • টর্চলাইট ও রেডিও (অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ)।
  • বাঁশি এবং হ্যামার।
  • হেলমেট/কুশন।
  • শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী ও ফার্স্ট এইড বক্স।
  • শিশু যত্নের সামগ্রী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

এসআর