বকেয়া বেতন আর আন্দোলন-সংগ্রামেই শ্রমিকের জীবনপার

সংগ্রামেই শ্রমিকদের জীবন
সংগ্রামেই শ্রমিকদের জীবন | ছবি: এখন টিভি
0

বকেয়া বেতন আর আন্দোলন সংগ্রামেই শ্রমিকদের জীবনপার। ন্যায্য মজুরির অভাবে জীবনকে সাজাতে পারছে না তারা। ট্রেড ইউনিয়নের পাশাপাশি শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তবে, কারখানাগুলো পরিদর্শনের পাশাপাশি শ্রমিকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে বলে দাবি শ্রম অধিদপ্তরের।

পহেলা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। আন্দোলন-উৎসবে বাংলাদেশেও পালিত হয় এই দিবসটি। তবে, শ্রমিকদের গুরুত্ব যেন শুধু এই একটি দিনকে ঘিরেই সীমাবদ্ধ।

শফিক হাওলাদার। ২৫ বছর ধরে করছেন বালি বহনের কাজ। শুরুতে দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি পেলেও এখন পাচ্ছেন ৫০০ টাকা। সে হিসাবে, আড়াই দশকে তার দৈনিক গড় আয় বেড়েছে মাত্র ২৫০ টাকা। আরেক শ্রমিক ইয়াসিন আরাফাত। প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছেন জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর কাজ। ১০ বছর আগে প্রতি বস্তায় ৫ টাকা মজুরি পেতেন, আজও চলছে সেই দর।

শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘আগে যে অবস্থা ছিল এখনও সেই অবস্থায় আছে। মালের দাম বাড়ে কিন্তু আমাদের ভাড়া বাড়ে না।’

আরেকজন শ্রমিক বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ বছর হয়ে গিয়েছে এখনো সেই ৫ টাকায় মজুরি চলে। আমাদের একটাই দাবি প্রতি বস্তা ১০ টাকা ন্যায্যমূল্যে লেবারের হাতে পৌঁছে দেয়।’

প্রযুক্তির যুগে মানুষের জীবনধারণকে সহজ ও ব্যয়বহুল করেছে কিন্তু শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় ঘটেনি তেমন পরিবর্তন। ন্যায্য মজুরি, কর্মঘণ্টা ও নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য আন্দোলন করলেও রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনো ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী মানুষদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মনে করেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা।

বরিশাল জেলা শাখা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘এখানে সব থেকে বড় সমস্যা অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত না করা। শ্রমিকরা যদি সংগঠিত হতে পারতো, শ্রমিকরা যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারতো, যদি প্রতিবাদ করার রাস্তা থাকতো তাহলে অনেক দাবি শ্রমিকরা আদায় করে নিতে পারতো।’

শ্রম অধিদপ্তর বলছে, অধিকার আদায়ে ছোট ছোট কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নেরও সুযোগ আছে, ট্রেড ইউনিয়ন করতে কেউ বাধার সম্মুখীন হলে, আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে তারা যদি নিয়মমাফিক আমাদের কাছে আবেদন করে এবং আমরা যদি কাগজপত্র ঠিক মতো পায় তাহলে আমরা ট্রেড ইউনিয়ন দিয়ে থাকি।’

এদিকে, বরিশালের বড় কারখানার শ্রমিকদের কাছ থেকে তেমন একটা অভিযোগ আসে না। তবে ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠান থেকে এলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক।

বরিশাল কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক নবীন কুমার হাওলদার বলেন, ‘প্রটোকল অনুসারে আমরা প্রত্যেকটি কারখানা, দোকানে ও প্রতিষ্ঠানে ভিজিট করি। সেই ভিজিট অনুসারে আমরা যদি কোনো ভায়োলেশন পায় আমরা সেইভাবে নোটিশ প্রদান করে থাকি।’

বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৬০টি কারখানায় কাজ করছেন লক্ষাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পুরুষ আর ৩০ শতাংশ নারী।

সেজু