ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি পেল টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প

টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প
টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প | ছবি: এখন টিভি
0

ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’। আজ (মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ভারতের নয়াদিল্লির লালকেল্লায় এক অধিবেশনে ইউনেসকোর রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটিতে (আইসিএইচ) আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নয়াদিল্লিতে চলমান ইউনেসকোর ইন্টারগভার্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের ২০তম অধিবেশনে বিশ্লেষণ শেষে ২০২৫ সালের চক্রে ইউনেসকোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ বা বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের এই বয়নশিল্পকে স্বীকৃতি জানানো হলো। নয়াদিল্লি থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা আসমা ফেরদৌসি।

আসমা ফেরদৌসি ছাড়াও এই অধিবেশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোয় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার মোহাম্মদ তালহা, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মো. ওয়ালিদ বিন কাশেম।

বাংলাদেশের ষষ্ঠ আইসিএইচ উপাদান হিসেবে টাঙ্গাইল বয়নশিল্প চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত হলো।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি শাড়ি তৈরি হয় ঐতিহ্য ও কারুশিল্পের সংমিশ্রণে। তাতে থাকে স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত নান্দনিক নকশা ও জটিল ভাব বা সুর। সাধারণত পুরুষরা সুতা রাঙান, কাপড় বুনে নকশা করেন। নারীরা চরকায় সুতা কাটেন।

আরও পড়ুন:

প্রতিবেদনে এই শাড়ি সম্পর্কে বলা হয়, টাঙ্গাইল শাড়ি হলো স্থানীয় তাঁতিদের ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁত বুনন কৌশলের চূড়ান্ত রূপ। যদিও শাড়িই এই বুনন কৌশলের সাধারণ এবং ঐতিহ্যবাহী প্রকাশ। সম্প্রতি একই কৌশল ব্যবহার করে আরও নানা ধরনের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। এই বুনন শিল্পটি মূলত এর নান্দনিক নকশা, স্থানীয়ভাবে তৈরি মোটিফ এবং স্বচ্ছ মসৃণতার জন্য স্বীকৃত ও বিশিষ্ট। টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতিটি অংশ যত্নের সঙ্গে তৈরি একেকটি শিল্পকর্ম।

এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ নামকরণটি টাঙ্গাইল অঞ্চলের নির্দিষ্ট জলবায়ু পরিস্থিতিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। টাঙ্গাইল শাড়ি শব্দটি কোনো একটি পণ্যের রূপকে বোঝায় না, বরং তাঁতির উৎপাদিত এই ধরনের সব পরিধেয়কে টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর একমাত্র পার্থক্য হলো সুতা প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত মূল উপাদান, যেমন- সুতি, সিল্ক, পাট ইত্যাদি। কিন্তু সব ধরনের পণ্যের মেত্রে বুনন কৌশল একই থাকে।

এর তাঁতিদের সম্পর্কে বলা হয়, ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি বসাক এবং জোলা সম্প্রদায় বোনে। বসাক সম্প্রদায় হিন্দু, আর জোলা সম্প্রদায় মুসলমান। উভয় সম্প্রদায়ই টাঙ্গাইল শাড়ি তাঁত সমিতির সদস্য।

বুনন কৌশল সম্পর্কে ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় তাঁতিরা জানিয়েছেন, বুনন কৌশল পরিবারের সদস্যদের দেখে অল্প বয়সে শেখা হয়। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণই মূল বিষয়। প্রতিটি বুনন এবং সেলাই একজন তাঁতিকে নিখুঁত করে তোলে। যেহেতু এই শিল্পের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রাতিষ্ঠানিক শেখার পদ্ধতি নেই, তাই প্রতিটি তাঁতির পরিবার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিক কৌশলগুলো হস্তান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এভাবে এই ঐতিহ্যবাহী দক্ষতা প্রজন্মা থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

এর সামাজিক ভূমিকা এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল হস্তচালিত তাঁতের শাড়ি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিচিতিকে তুলে ধরে। এটি দুর্গাপূজা, বাংলা নববর্ষ, বিবাহ এবং দুই ঈদ উৎসবে পরিধেয় পোশাক।

ইউনেস্কোর এই খবর পাওয়ার পর শাড়ির বুনন শিল্পীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, ‘ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি পাওয়া এটি কল্পনার বাইরে। এতে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে। আমরা আমাদের সোনার হাঁস তাঁতের কারিগর গুলো হারিয়ে ফেলেছি। অনেক শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। এতে বেগ পোহাতে হবে। এখন দেশি বিদেশি মানুষগুলো হাতের তৈরি টাঙ্গাইল শাড়ি খুঁজবে।’

সেজু