যানজট জর্জরিত ঢাকা মহানগরী। ২৫০ কিলোমিটারের একটু বেশি বাস চলাচলের যোগ্য সড়কের এ নগরীতে মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে আছে ৩৮০টির বেশি বাস রুট। অথচ এসব বাসরুটের অধিকাংশই অচল।
বিভিন্ন কূটকৌশল ও রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া এসব বাস রুটের বেশির ভাগেই, পরিবহনও চালাতে চায় না সংশ্লিষ্টরা। এতে তিনশতাধিক রুটের বাস এক রুটে এসে যেমন সড়কে তৈরি করছে নৈরাজ্য, গতিহীন করেছে শহর, তেমনি ভোগান্তিতে ফেলেছে কোটি মানুষকে।
যাত্রীরা জানান, জ্যাম এতই বেশি যে ১ ঘণ্টার পথ যেতে দ্বিগুণ সময় লাগছে, দুর্ভোগে অতিষ্ট তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিপুলসংখ্যক রুটের বিন্যাস সাধারণ যাত্রীর সুবিধা বা নগর পরিকল্পনার ভিত্তিতে হয়নি। এতে সড়কের সক্ষমতা কমার পাশাপাশি বেড়েছে গণপরিবহণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘রুট র্যাশনালাইজেশনের কথা বলার পরও, তারা কথা শোনেনি। কারণ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল স্কিলে এখানে অনেক বাণিজ্য করা যায়। ঢাকায় এই যে পরিবহনের পাল্টাপাল্টি অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখেন, এটা তৈরির আয়োজক হলো বিআরটিএ এবং আরটিসি রুট। মূল চিকিৎসা করতে হবে, যারা বসে বসে অন্যায় করছে, জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে, যাদের গণপরিবহনের জ্ঞান ধ্যান নেই, তারাই এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পয়সার বিনিময়ে।’
জাপানি সংস্থা জাইকার ২০১৫ সালের স্টাডি বলছে, ঢাকা শহরে মাত্র ৪২টি রুটের মাধ্যমে চমৎকার গণপরিবহণ নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব, যা আধুনিক গণপরিবহনেরও সহায়ক হবে।
সম্প্রতি তেমনি উদ্যোগ নিতে চায় বলে জানিয়েছে, ঢাকা পণ্য ও যাত্রী পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ঢাকার ৩০০টিরও বেশি রুট বাতিল করে, নতুন করে ২৭টি রুটের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
নতুন রুট বিন্যাসের একটি খসড়া তালিকা এসেছে এখন টিভির হাতে। সেখানে ঢাকার রুটগুলোকে দীর্ঘ করে বাদ দেয়া হয়েছে আগের সাড়ে তিনশোটির বেশি রুট।
আরও পড়ুন:
ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমাদের বেশ কিছু রুট আছে যেগুলো একসময় অনুমতি দেয়া ছিল, কিন্তু তাদের কাছে এগুলো অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় এগুলো এখন কার্যকর নয়। সর্বশেষ আমরা একটা অ্যানালাইসিস করে দেখেছি যে, রুটগুলোর যদি আমরা দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ফেলতে পারি, তাহলে রুটের সংখ্যাটা কমে যাবে। এতে রুট ম্যানেজমেন্টে সুবিধা হবে।’
যদিও এসব রুটের বিষয়ে সংযোজন ও সন্নিবেশিত করার সঙ্গে আরও ১৫টি রুট বিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছে মালিক সমিতি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আরটিসি মিটিংয়ে পাশ হতে পারে রুটগুলো। এতেই বিলুপ্ত হবে প্রায় সাড়ে তিনশো বাস রুট।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘আমাদের যে প্রস্তাব আছে, সেটার সঙ্গে পুলিশ কী ভাবছে, পুলিশের কী প্রস্তাব আছে এবং মালিক সমিতির প্রস্তাব—তিনটাকে একটা ম্যাট্রিক্সে নিয়ে এসে আমরা একটা যৌক্তিক প্রস্তাব, একটা সংখ্যা নির্ধারণ করেছি এবং আমরা চিন্তা করছি যে সেটা একটা ওয়েবসাইটে দেবো সবার মতামত নেয়ার জন্য।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি, আমরা এটাকে অচিরেই, আশা করি আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ওটা সম্পন্ন করে ওই জায়গাটায় প্রকাশ করতে পারবো।’
পুলিশ ও মালিক সমিতির প্রস্তাবিত রুটগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রুট কমিয়ে আনা হলেও দীর্ঘ করা হয়েছে বাসের যাত্রাপথ। আর এতেই প্রথমবারের মত যাত্রীরা সুযোগ পাবে নগরীর দু’প্রান্তে ট্রানজিটহীন যাত্রার। এতে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে যাত্রীদের, তেমনি ভোগান্তি থেকেও মিলবে মুক্তি।





