ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা। বিপরীতে আন্দোলন দমাতে মরিয়া শেখ হাসিনা সরকার। এদিকে প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নাড়া দিয়েছে প্রবাসীদের হৃদয়েও।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় অনেক প্রবাসী ছাত্র-জনতার সমর্থনে নেমে আসেন রাস্তায়। ১৯ জুলাই আন্দোলনের প্রধান কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে নতুন ফাঁদ পাতে সরকার। তখনই প্রবাসী আন্দোলনকারীদের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তারেক।
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাসিনা সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করে। প্রবাসীদের রেমিটেন্স শাটডাউনের ঘোষণায় চব্বিশের জুলাইয়ে ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে দেশে।
তারেক বলেন, ‘আমরা যদি রেমিট্যান্সটা বন্ধ করে দেই, যেহেতু এটা আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে খুব ইফেক্টিভলি সম্পৃক্ত। ওই চিন্তাভাবনা থেকে আমি রেমিট্যান্স বন্ধ করার বিষয়টা নিয়ে লিখালিখি শুরু করেছি। রেমিট্যান্স বন্ধ হওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে এক ধরনের চাপে পড়ে গেছে। এটা জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিবৃতি থেকেই আমরা দেখতে পেরেছি।’
প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক হাত জোড় করে সমর্থন চেয়েছিলেন প্রবাসীদের কাছে।
জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘যারা আজকে উস্কানি দিচ্ছে যে রেমিট্যান্স পাঠিয়েন না। রেমিট্যান্স পাঠানো ছয় মাস বন্ধ রাখেন তাহলে সরকার পতন হয়ে যাবে। প্রবাসী ভাই-বোনদের সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে আবারও করজোড়ে অনুরোধ করতে চাই, এই মিথ্যা গুজবে আপনারা কান দিবেন না। আমাদের দেশের সম্পদ, আমাদের সরকারের যত অবকাঠামো এগুলো কিন্তু আপনাদের রেমিট্যান্সের পয়সা, দেশের কৃষক, শ্রমিক ব্যবসায়ী- সার ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে তৈরি।’
এদিকে ছাত্র-জনতার সমর্থনে রাজপথে বিক্ষোভের জেরে ৫৭ প্রবাসীকে দোষী সাব্যস্ত করে কঠোর সাজা দেয় আরব আমিরাতের আদালত। এর মধ্যে ৫৩ জনকে ১০ বছর, একজনকে ১১ বছরসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মুক্তি পান নির্ভীক প্রবাসী আন্দোলনকারীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রথমবারের মতো জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা জানান দিয়েছেন লাখো প্রবাসী।
সিএসপিএসের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক কোটি ৩০ লাখ লোক তারা এমন হয়েছিল যে, আগের সরকারের প্রতি মারাত্মক রকমের অতিষ্ঠ ছিল। এতটাই ক্ষোভ তাদের ছিল যে, যখন সুযোগ পেয়েছে তারা বিদ্রোহ করে বসছে। যেভাবে তারা ডলার দেয়া বন্ধ করেছিল, ওই সরকার একটা দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। যার জন্য তাদের আসলে এই আন্দোলনে মারাত্মক রকমের টনক নড়েছিল।’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যাত্রী আসার আগেই কনভেয়ার বেল্টে পৌঁছে যাচ্ছে লাগেজ। ফ্রি টেলিফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে স্বজনদের সঙ্গে। যদিও অতিরিক্ত বিমান ভাড়া, ভিসা জটিলতা কাটেনি এখনও।
ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিদেশে যাওয়ার যে ক্লিন ব্যবস্থা করা সেটা করা এখনও বাকি আছে। তাদরে যাওয়ার জন্য যে খরচটা, যে টাকা খরচ হয়, কয়েক লাখ টাকা, এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। এটাকে রিজনেবল করা প্রয়োজন। তাদের প্লেন খরচটা ঠিকমতো করা। ওখানের বিদেশি যে অ্যাম্বাসি, বাংলাদেশের যে অ্যাম্বাসি বিদেশে কাজ করে, তারা তাদেরকে মর্যাদা দেয়া। তাদের ভিসা, পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য তাদের ঠিকমতো সহযোগিতা করা।’
গত বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমে দাঁড়ায় ১.৯৫ বিলিয়ন ডলার। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস গড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে।