কুয়াকাটায় নির্মাণের আগেই ধসে পড়েছে সৈকত সড়ক

ধসে পড়া সৈকত সড়কের একাংশ
ধসে পড়া সৈকত সড়কের একাংশ | ছবি: এখন টিভি
0

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধ্বংস হয়ে গেল কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নান্দনিক সৈকত সড়ক। সমুদ্রের তীব্র ভাঙনে ধসে পড়েছে রাস্তায় অংশ। নিম্নমানের কাজ আর পরিকল্পনাহীনতায় সড়কের বেহাল দশা বলছেন স্থানীয়রা। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও শেষ হয়নি কাজ। আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও। জনগণের টাকা গচ্চা যাওয়ার পর শেষমেশ প্রকল্পটি বন্ধের সুপারিশ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

সাগর কন্যার অপরূপ সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন হাজারও পর্যটক ভ্রমণ করেন কুয়াকাটা। পর্যটকদের ঘিরেই সচল থাকে সেখানকার অর্থনীতির গতি।

সাগরকন্যাকে নতুন করে সাজাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কুয়াকাটা সমুদ্রের পাশে নান্দনিক সৈকত সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যেখানে হোটেল সি-ভিউ থেকে ঝাউবন পর্যন্ত ১ হাজার ৩শ’ মিটার সৈকত সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের মার্চে শুরু হয় সড়ক নির্মাণ কাজ। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের মার্চে। সড়ক নির্মাণের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র এক কিলোমিটারের কম। এদিকে, যে এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে উদ্বোধনের আগেই তার বেশিরভাগ জায়গা ধসে পড়েছে। যাতে পর্যটক চলাচল প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় টেকসই পরিকল্পনা এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া কাজ করায় জনগণের কোটি টাকার প্রকল্প নষ্ট হয়েছে বলছেন পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা।

পর্যটকরা জানান, রাস্তার ভাঙার জন্য পানি ওঠে যায়। চলাচল করতে সমস্যা হয়। হাঁটার মতো কোন রাস্তা নেই।

ব্যবসায়ীরা জানান, পরিবেশ ভালো থাকলে এখানে পর্যটক আসবে। ব্যবসা ভালো হবে। কিন্তু ব্রিজটা যদি ভাঙা থাকে তাহলে তা আমাদের জন্য দুঃখজনক।

ভাঙনের কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৈকতের বালু ক্ষয়, জোয়ার ও নিম্নচাপের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প হাতে নেয়ায় টেকানো যাচ্ছে না সড়কটি। এ অবস্থায় ভাঙনের কারণ খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে ১ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা থাকলেও এক মাস পেরিয়ে গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা সৈয়দ তারিকুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত রাস্তাটি প্রায় ভেঙে যাচ্ছে। এরইপ্রেক্ষিতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা জরুরি কাজ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে আপাতত শুরু করছি। আশা করছি এটা শেষ হলে আপাতত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘প্রটেকশন ব্যতীত কুয়াকাটার মতো একটি ভাঙন সমৃদ্ধ বিচে এ ব্রিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিলো। তাই আমরা এ প্রকল্প প্রতিবেদনটি থামানোর জন্য প্রকল্প পরিচালক ব্বরাবর আমাদের একটি চিঠি প্রেরণ করবো। এবং আমাদের ডিসি স্যার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করবো।’

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওসার বলেন, ‘টেন্ডার হয়েছিল, সেই টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার পর এটার ফিজিক্যাল এবং ফিন্যান্সিয়াল প্রোগ্রেস কতটুকু হয়েছে এবং সে প্রোগ্রেসে কতটুকু পেমেন্ট দেয়া হয়েছে, প্রোগ্রেস অনুযায়ী হয়েছে কি না এ তথ্যগুলো সে আমাকে দিলে পরবর্তীতে আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।’

কুয়াকাটা পৌরসভার আওতায় ১৩শ’ মিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয় ইম্পরট্যান্ট আরবান ইনফ্যাকচার-২ প্রকল্পের অধীনে। যার কাজ পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মোল্লা ট্রেডার্স, আবরার ট্রেডার্স ও এস এম ট্রেডার্স। সরকারি পট পরিবর্তনের পর যাদের বেশিরভাগই কাজ বাদ দিয়ে গা ঢাকা দেয়।

ইএ