জমিতে ধান কিংবা সবজি চাষের আগে কয়েক দফা সার ও রাসায়নিকের ব্যবহার একদিকে যেমন খরচ বাড়ায় তেমনি নষ্ট করে মাটির গুণাগুণ। তবে প্রচলিত এসব ক্ষতিকারক রাসায়নিকের বিপরীতে প্রাকৃতিক উপকরণে চাষাবাদের পদ্ধতি তৈরি করেছেন নেত্রকোণার একদল কৃষক।
নেত্রকোণা-মদন সড়কের আটপাড়ার দূর্গাশ্রমে ফসলের এই হাসপাতালেই শেখানো হয় প্রাকৃতিক উপকরণে চাষাবাদের পদ্ধতি।
এ হাসপাতাল রাসায়নিকের পরিবর্তে কৃষকদের প্রাকৃতিক উপকরণের মাধ্যমে জমির পোকা দমন ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করে। এতে একদিকে যেমন চাষাবাদে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় কম হচ্ছে, পাশাপাশি কমছে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
উদ্যোক্তা কৃষকরা জানান, পরিবেশ রক্ষার জন্য জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে বলা হয় সবাইকে। আমরা কৃষকদের পদ্ধতি দিয়ে দেই, এতে করে তারা বাড়িতে নিজেরাও এ জৈব বালাইনাশক তৈরি করতে পারে।
কৃষি বিভাগ ও ধান গবেষণাকারী সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে হাসপাতালটির পরিচালনা করছেন ২৭ কৃষক। সমিতি গঠন করে মাসিক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে চলছে কার্যক্রম। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে অনেক কৃষক আসেন পরামর্শ নিতে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘জৈবিক সার দিলে দেখা যায় খরচ কম লাগে। ফসল ও ভালো থাকে। পরিবেশও ঠিক থাকে। এতে আমাদেরও অনেক উপকার হয়েছে। রাসায়নিক সার ছাড়া কিভাবে জৈবিক সারের মাধ্যমে আমরা আমাদের ফসল ভালো রাখতে পারি এই বিষয়েই শেখানো হচ্ছে কৃষি হাসপাতালে।’
পরিবেশবিদ মো. অহিদুর বলেন, ‘গাছের ওষুধ নিজ হাতে তৈরি করে তারা। সেই ওষুধ দিয়েই গাছের বিভিন্ন রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের চিকিৎসা করে থাকেন। এবং এটা গত ১০ বছর ধরে এ এলাকার কৃষকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।’
প্রাকৃতিক উপকরণের মাধ্যমে চাষাবাদ পদ্ধতি বিস্তারে কৃষকদের নানা পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে কৃষি বিভাগ ।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘নিজেদের সঙ্গে আলোচনা করে আইভিএম সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়েছেন। ফসলে কোনো পোকা বা রোগবালাই হলে তারা এখানে নিয়ে আসেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাময় করে থাকেন। তারপরেও যদি তাদের অধিকতর কোনো পরামর্শের দরকার হয় তাহলে আমাদের কৃষি বিভাগ যারা আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এভাবেই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাদের উদ্যোগটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’