ঝুড়িতে রাখা টসটসে আমগুলো দেখলেই স্বাদ নেয়ার ইচ্ছা জাগে। মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে হাড়িভাঙা আমের যাত্রা শুরু হলেও এখন এর উৎপাদন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিভাগজুড়ে। এরই মধ্যে নীলফামারী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট জেলায় বাণিজ্যিকভাবে এই আম চাষ শুরু হয়েছে।
হাড়িভাঙা আমের আদি নাম ছিল ‘মালদিয়া’। তবে ‘হাড়িভাঙা’ নাম পাওয়ার পর থেকেই আমটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। প্রায় ৩৫ বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে এই আমের চাষ শুরু হলেও, গত দুই দশকে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এই আমের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।
হাড়িভাঙার বাণিজ্যিক উৎপাদন বদলে দিয়েছে মিঠাপুকুর উপজেলা তথা গোটা রংপুর অঞ্চলের অর্থনীতি। দুই দশক আগেও যেখানে মানুষের ঠিকমতো খাবার জুটত না, এখন তারা হয়েছেন স্বচ্ছল। অনেকেই এখন জমি-জমা ও দালান-কোঠার মালিক। আর এই পরিবর্তনের পেছনে বড় অবদান রেখেছে হাড়িভাঙা আম। তবে সরকারিভাবে বড় পরিসরে রপ্তানি না হওয়ায় হতাশ বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, এখন বাজার ভালো, আমের দামও একটু বেশি। আগে আমরা অন্য কাজ করতাম, এখন আম-সংশ্লিষ্ট নানা কাজে যুক্ত থেকে ভালো আয় করতে পারছি।
মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ হাট হয়ে উঠেছে সারাদেশের পাইকারি ও অনলাইন ব্যবসায়ীদের মিলনস্থল। দূরদূরান্ত থেকেও ব্যবসায়ীরা এই হাটে আম নিয়ে আসেন। তবে, অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা জমে, দুর্ভোগে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতারা। যদিও রাস্তাঘাট উন্নয়ন ও সরকারিভাবে আম রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জ্যাম-জেলি যাই বলি না কেন, ভারত ও মায়ানমার থেকে প্রচুর ফল আসছে, আমাদের বাজারের একটা বড় অংশ তারা দখল করে আছে। যদি আমরা জুস ফ্যাক্টরি গড়ে তুলতে পারি, হাড়িভাঙার বড় একটা অংশ দিয়েই সেটা চালানো সম্ভব। এতে হাড়িভাঙা আমকে আরও এগিয়ে নেয়া যাবে।’
চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ১ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২৭ হাজার টন আম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় আড়াই শ’ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন গবেষকরা বলছেন, এই মৌসুমে দেশি ফলের উৎপাদন বাড়ায় বিদেশি ফল আমদানির খরচ অনেকটাই বেঁচে যাচ্ছে। কৃষক, ব্যবসায়ী ছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক মানুষ পাচ্ছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন গবেষক ও শিক্ষক উমর ফারুক বলেন, ‘আম উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্প্রসারিত হয়েছে, এখন সংরক্ষণের দিকেও গুরুত্ব দেয়া জরুরি।’