হাওর পাড়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবন হাওর দ্বারা প্রভাবিত। এই অঞ্চলের মানুষের চিন্তা-চেতনা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য, কৃষি সবকিছু হাওর কেন্দ্রিক। তাই এসব ক্ষেত্রে হাওর এলাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার ভিন্নতা চোখে পড়ার মতো।
বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও বাড়ি আঙ্গিনা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন এই অঞ্চলের মানুষদের চলাচলের একমাত্র ভরসা হয় ছোট বড় বাহারি রকমের নৌকা। এমনকি বর্ষা মৌসুমে এই নৌকা দিয়ে হাওরাঞ্চলে মানুষরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি চলাচলের জন্যও এই বাহনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মূলত জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবান নগর ইউনিয়নের মাইজবাড়ি গ্রামটিতে কয়েক যুগ ধরে তৈরি হচ্ছে কাঠের নৌকা। গ্রামের প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রধান পেশা নৌকা তৈরি করা।
প্রতিদিন ভোরে হাতুড়ির ঠক ঠক শব্দে ঘুম ভাঙে এ গ্রামের শিশু থেকে শুরু বৃদ্ধদের। সূর্য ওঠার আগেই কারিগররা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নৌকা তৈরির কাজে। বছরের ১২ মাসই থাকে নৌকার কারিগরদের ব্যস্ততা। এমনকি এই নৌকা গুলো দিয়ে চলাচলের পাশাপাশি বিভিন্ন বালু কিংবা পাথর মহালে কাজ করে জীবিকার যোগান দেন দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ।
তবে বছরের পর বছর এ গ্রামের মানুষ নৌকা তৈরি করে ভাগ্য বদলাতে পারছেন না।
মাইজবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নৌকা তৈরি করা তাদের পূর্ব পুরুষদের কাজ। তারাও বংশ পরম্পরায় এ কাজ করে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে সুষ্ঠু বিনিয়োগের অভাবে এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারছেন না তারা।
এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা জানালেন, নৌকা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা জেরিন বলেন, ‘তাদের নিয়ে আমার একটা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। এ শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এটি একটি বিরল শিল্প। তাই এটি বাঁচিয়ে রাখতে আমার উপজেলা কর্তৃপক্ষ সর্বদা শিল্পের সাথে জড়িতদের পাশে থাকবে।’
জেলার একটি গ্রামের নৌকা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে বদলে যাবে মাইজবাড়ি গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতিসহ মানুষের জীবনযাত্রা।