সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সাতটি ব্রিজ এখন শুধু ভাঙা স্মৃতি। কোথাও নদীর বুকে পড়ে আছে কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষ, কোথাও ঝুলে আছে দুই পাড়ে।
বাকড়া, টিকেট, হিজলডাঙ্গা, চরগোবিন্দপুর, শিমুলবাড়িয়া, ডাড়ার খাল আর এল্লারচর এ ব্রিজগুলো এক মাসেরও কম সময়ে যেন হঠাৎ করেই হারিয়েছে অস্তিত্ব।
সাতটি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষের চলাচল থমকে গেছে। জেলা সদরে যাতায়াতের ৪ থেকে ১০ কিলোমিটারের পথ যেতে ঘুরতে হচ্ছে ২০ কিলোমিটারের বেশি, বেড়েছে সময়, খরচ আর ভোগান্তি।
জরুরি প্রয়োজনে কিংবা প্রতিদিনের কাজে প্রতিটি পদক্ষেপেই দুর্ভোগ সঙ্গী। সবচেয়ে বেশি ভুগছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী আর স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
স্থানীয়রা জানান, তাদের যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। নদী খরস্রোতা হওয়া ব্রিজ ভাঙার একটি কারণ বলেও জানান কেউ কেউ।
কয়েকটি জায়গায় ভেঙে পড়া ব্রিজের স্থানে যাতায়াত চালু রাখতে নিজেরা চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এসব সাঁকো দিয়ে ভারী যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে পণ্য পরিবহন আর জরুরি চলাচলে এখনও দুর্ভোগ কমেনি।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামবাসীর যোগাযোগের একমাত্র পথ এটি। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা মিলে বাঁশ দিয়ে চলার মতো একটি ব্রিজ তৈরি করে চলাফেরা করছেন তারা। এ ব্রিজ ভাঙা থাকার কারণে ৯ গ্রামের মানুষ বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানান তারা।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যখন ব্রিজগুলো নির্মাণ হয়, তখন পলি জমে ভরাট হওয়া মরিচ্চাপ নদী ছিল সরু একটি খাল। সেই অবস্থার ভিত্তিতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ করে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
তখন নদীর প্রকৃত প্রস্থ, জোয়ারের চাপ বা ভবিষ্যৎ খননের বিষয় বিবেচনায় আনা হয়নি। নেয়া হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত। পরবর্তীতে নদী খনন করা হলে পানির স্রোতে বেড়ে যায় নদীর প্রস্থ, আর তাতেই একে একে ভেঙে পড়ে ব্রিজগুলো।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ- ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাজকিয়া বলেন, ‘এটার জন্য এনওসি নিলে আমরা সুপারিশ করতাম যে কতটুকু জায়গা রেখে ব্রিজ বা কালভার্ট বানাতে হবে। সেটা তো নেয়নি, আমাদের সঙ্গে আলাপও করেনি। এমনকি নদী খননের সময়ও যদি আমাদের জানাতো তাহলে আমরা এটা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম।’
ধসে পড়া সাতটি ব্রিজের মধ্যে চারটি এলজিইডির মাধ্যমে নতুন করে নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জানালেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, ‘নদী খনন করায় এর প্রশস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ে। আমরা জায়গাটি পরিদর্শন করে আপাতত চলাচলের জন্য ব্যবস্থা করেছি।’
ভুল পরিকল্পনা আর দপ্তরীয় সমন্বয়হীনতায় দায়ে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। ধসে পড়া ব্রিজের সঙ্গে যেন ভেঙে পড়ছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, শিক্ষার ধারাবাহিকতা ও জীবিকার পথ।
স্থানীয়দের দাবি, উন্নয়ন যেন শুধু কাগজে কলমে না হয়ে বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়।