সম্প্রতি যশোরের অভয়নগরে এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বুক পর্যন্ত বালুতে পুঁতে রেখে নির্যাতন ও চাঁদা আদায়ের ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে সমালোচনা। গত ৩১ জুলাই এ ঘটনায় রাজঘাট সেনা ক্যাম্প ও অভয়নগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সৈকত হোসেন হিরা নামে একজন শাহনেওয়াজকে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে জনি তাকে মারধরের পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করে। এরপর দুই কোটি টাকা দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পান শাহনেওয়াজ।
একই মাসের ১৮ তারিখ আবারও শাহনেওয়াজকে তুলে নিয়ে যায় হিরা। খবর পেয়ে তার স্ত্রী একটি ইকোপার্কে গিয়ে দেখতে পান তার স্বামীকে বুক পর্যন্ত বালুতে পুঁতে রাখা হয়েছে। পরে জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আবারও দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে সাংবাদিক মফিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি দেয়া হয় আরও এক কোটি টাকার চেক। এরপর প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীরের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, জনির রাজনৈতিক বড় ভাই আছে এবং সে কাউকে পরোয়া করে না বলে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা কোনোদিন প্রকাশ পেলে শাহনেওয়াজ ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এ ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের কাছে বারবার গেলেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানান আসমা খাতুন।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি ও সাংবাদিক মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগযোগ করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে, ফেসবুকে পোস্টে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তারা। প্রতিশোধ নেয়ার হুমকিও দেন ফেসবুকে পোস্টেের মাধ্যমে।
ঘটনা তদন্তে বিএনপি ২ সদস্যের কমিটি করেছে। আর পুলিশ বলছে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। দুই সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে তার অপরাধ প্রমাণিত হলে চূড়ান্তভাবে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
যশোর অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আলিম বলেন, ‘আসমা খাতুন একটা অভিযোগ করেছেন। উনার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
জনির বিরুদ্ধে লুটপাট, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সংগঠন বিরোধী নানা কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তার সাংগঠনিক সম্পাদক পদ স্থগিত রেখেছে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি।