বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ২ নম্বর গেট এলাকা। ঐতিহাসিক এ ‘বিপ্লব উদ্যান’ থেকেই ৭১ সালে দেশবাসীকে যুদ্ধে যোগ দেয়ার ডাক দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। যা নগরবাসীর কাছে এখন অবসর-বিনোদনের অন্যতম পছন্দের জায়গা। প্রতিদিন বিকেলে বা ছুটির দিনে অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন সময় কাটাতে।
তবে ঐতিহাসিক এ উদ্যানের দিকে শয়তানি দৃষ্টি পড়েছে কুচক্রীদের। সাবেক মেয়র আ. জ. ম নাছিরের সময় গাছ কেটে সর্বপ্রথম করা হয় দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট। এরপর মেয়র রেজাউল করিমের সময় আরেক দফা ভাঙা-গড়া হয় উদ্যানের।
সম্প্রতি আবারো টিনের বেড়া আর ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে উন্মুক্ত জায়গাটি। ভিতরে খোলা জায়গায় বসানো হয়েছে নাগরদোলা, সাম্পান, ড্রাগন ট্রেন। গড়ে তোলা হচ্ছে ৩৫টি অস্থায়ী দোকান। এভাবেই নগরবাসীর প্রশান্তির জায়গায় চলছে জুলাই বিজয় মেলার প্রস্তুতি।
‘ছাত্রসমাজ চট্টগ্রাম মহানগর’ ব্যানারে আয়োজন করা হচ্ছে ১৫ দিনব্যাপী এ মেলা, যার অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসীর অবসর বিনোদনের জায়গায় মেলার অনুমতি দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন উদ্যানে ঘুরতে আসা নিসর্গপ্রেমীরা। মেলার আয়োজকরা দাবি করছেন, দুই লাখ টাকা দিয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে মেলা আয়োজনের অনুমতি নিয়েছেন তারা।
এক বাসিন্দা বলেন, ‘মেলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভবান হবে। তবে মানুষ ২০ দিনের জন্য বসবে কোথায়? এখন খোলা এ জায়গাটি ভরাট হয়ে যাবে।’
মেলার বিষয়ে আয়োজক বলেন, ‘আয়োজনে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাচ্চাদের জন্য শিশু পার্ক এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। পাশাপাশি পাওয়া যাবে জামদানি শাড়ি, দেশীয় পণ্য, তাত বস্ত্র।’
ঐতিহাসিক উদ্যান ও উন্মুক্ত সবুজ স্থানে বাণিজ্যিক মেলার অনুমতি দেয়ায় ক্ষুব্ধ সচেতন নাগরিক সমাজ। আগের মেয়র যে পথে হেঁটেছেন, বর্তমান মেয়রও সেই ভুল পথে হাটছেন বলে অভিযোগ তাদের।
চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘যিনি অনুমতি দিয়েছেন এবং যারা আয়োজন করছেন, দু’পক্ষই সমান দোষী। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। আমরা এতে তীব্র ঘৃণা জানাই। আশা করবো তাদের বিবেকবোধ কাজ করলে এ জায়গা থেকে তারা সরে আসবে।’
অপরদিকে মেয়রের দাবি, জুলাই-আগস্টের ছবি প্রদর্শন করবে বলেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো ধরণের মেলা আয়োজনের সুযোগ নেই। তিনি আরও জানান, এক মাস পর মাঠে গ্রিন পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আরও এক মাস পরে পার্কের কাজ শুরু হবে। এই এক মাস সিটি কর্পোরেশন যদি জুলাই-আগস্টের ফটো দিয়ে এক্সিবিশনের ব্যবস্থা করে, বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে দোষের কিছু নেই।’