দুর্গম পাহাড়ে ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ সিস্টেমে কমবে দুর্যোগের ঝুঁকি

পার্বত্য বান্দরবানের নাইখ্যংছড়ির পাহাড়ি পাড়া
পার্বত্য বান্দরবানের নাইখ্যংছড়ির পাহাড়ি পাড়া | ছবি: এখন টিভি
0

দুর্গম পাহাড়ে সূচনা হতে চলেছে নতুন যুগের। আর্লি ওয়ার্নিং বা আগাম সতর্কতা প্রকল্পে পাল্টে যাচ্ছে দুর্যোগ মোকাবেলার ধরণ, একইসঙ্গে কমছে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি। ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এ প্রকল্প, পাহাড়ে পৌঁছে দিচ্ছে আগাম সতর্কতার বার্তা।

পার্বত্য বান্দরবানের নাইখ্যংছড়ির দুর্গম এক পাহাড়ি পাড়া। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে এখানে বসবাস করছে মারমা জনগোষ্ঠী। আকাশে মেঘের ঘনঘটা বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে নামতেই পাড়াজুড়ে নামে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বা আতঙ্ক।

এ জনপদের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের ভাজে ভাজে ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য বসতি। যেখানে পৌঁছায়নি প্রযুক্তি, নেটওয়ার্ক বা যোগাযোগের ছোঁয়া। বর্ষায় তাই মনোমুগ্ধকর পাহাড় হয়ে উঠে বিপদের ঠিকানা। জেলা প্রশাসনের হিসেবে, গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রাণ গেছে ৩৫০ জনের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহার ভাঙার আতঙ্কে তারা সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারছেন না। যেকোনো সময় পাহাড় ভেঙে ঘটতে পারে বড় কোনো বিপদ।

ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তায়, আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তত ৬ হাজার মানুষ আগেভাগে জানতে পারছেন পাহাড়ধসের ঝুঁকির খবর। যেখানে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও স্থানীয় একটি সংস্থা। যার মাধ্যমে আগাম সতর্ক বার্তা কখনও দেয়া হচ্ছে মোবাইলে, কখনও তা সম্ভব না হলে প্রচার হচ্ছে মাইকিং, মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডায়। অধিক ঝুঁকিতে থাকাদের দেয়া হচ্ছে আর্থিক প্রণোদনাও।

স্বেচ্ছাসেবকেরা জানান, মোবাইলে আগাম বার্তা পেয়ে তারা স্থানীয়দের জানিয়ে দেয়। ফলে বিপদের আগেই নিরাপদ স্থানে চলে আসতে পারেন তারা।

সেভ দ্য চিলড্রেন সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘তিনটি অটোমেটিক স্টেশনের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বেশি তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারবে।’

নাইক্ষ্যংছড়ির হর্টিকালচার সেন্টারে স্বয়ংক্রিয় ক্ষুদ্র ওয়েদার স্টেশন, বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে স্থানীয় কৃষকদের চাষাবাদে আগাম বার্তা দেয়। প্রকল্পের আওতায় এমন অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন এবার পাহাড়ধসের ঝুঁকি শনাক্তে বসানো হবে বান্দরবানের লামা ও নাইখ্যংছড়ি উপজেলায়। যেখানে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার ধরা পড়লেই আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জারি হবে সতর্কতা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় ওয়েদার স্টেশন বসাতে পারলে ভূমিধসে বিপন্ন মানুষের সংখ্যা কমে যাবে।’

এফএস