দ্বীপজেলা ভোলার পূর্বপাশ ঘেঁষে মেঘনার গতিপথ মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। সেই পথের মাঝেই জন্ম নিয়েছিল নতুন ভূমি সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর। নব্বইয়ের দশকে নদীভাঙনে উচ্ছেদ হওয়া মানুষ আশ্রয় নেয় এখানেই। এরপর থেকে ধান, সবজি আর মাছের চাষে সমৃদ্ধি আসে চরটিতে। গড়ে ওঠে প্রায় চার হাজার কৃষক ও জেলে পরিবারের বসতি।
তবে মেঘনার ভাঙনে এবারে নিঃস্ব এ জনপদের মানুষ। গত ১৫ দিনেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় তিনশো একর জমি। রামদেবপুর, চর টবগী, মধুপুরসহ অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে ভাঙন দেখাচ্ছে তার ভয়াবহতা।
মাঝের চরের নুরজাহান বিবি। প্রায় ৩০ বছর আগে মেঘনার ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে মাঝের চরের সরকারি আবাসনে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। তবে গেলো কয়েক দিনের ভাঙ্গনে নদীতে বিলীন হয়েছে তার শেষ আশ্রয়। তাই সব হারিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।
চরের বাসিন্দা নুরজাহান বিবি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘড় ভেঙে ধ্বংস হয়ে গেছে। ঠাঁই নেয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।’
শুধু নুরজাহান বিবিই নন, ভাঙনের কবলে পড়েছে ৭৫০টি পরিবার। বিলীন হয়েছে ২৮০ একর ফসলি জমি। ভেসে গেছে বাজার, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা আর কমিউনিটি ক্লিনিক। এতে আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন অন্য জায়গায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু উজানের পানির স্রোতে নদী ভাঙ্গন নয়, মেঘনায় তীর ঘেঁষে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এর অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন:
ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বালু উত্তোলনের কারণে তাদের সাতশ থেকে আটশো বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকার কারণেই তাদের দুর্ভোগ বলে জানান স্থানীয়রা।
ভাঙনরোধে দ্রুতই প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা। আর ভাঙনের কবলে পড়া চরবাসীর পাশে থাকার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন আরিফ বলেন, ‘এসব এলাকাগুলোতে এরইমধ্যে জরুরি কাজ বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি ভাঙন রোধে জরুরি কার্যক্রম চলমান আছে।’
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যেহেতু ন্যাশনাল ইকোনমিতে ভালো কোনো সাপোর্ট নেই, সেহেতু আমরা ভিজিট করে চরটিকে রক্ষা করা কতটুকু ফিজিব্যেল তা যাচাই করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করবো।’
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘আমাদের আশ্রয় প্রকল্প আছে, সেটাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। আমাদের যে সমস্ত খাস জমি আছে সেখানে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। এরইমধ্যে সদর উপজেলা র্নিবাহী অফিসারকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’