ময়মনসিংহে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নারীদের হাতে তৈরি নান্দনিক কারুপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে

নিজেদের কারখানায় কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা
নিজেদের কারখানায় কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা | ছবি: এখন টিভি
0

ময়মনসিংহে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নারীদের হাতে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক কারুপণ্য। চোখ জুড়ানো ডিজাইন এবং মানে অনন্য হওয়ায় এসব পণ্য যাচ্ছে ফ্রান্স, জাপান, বেলজিয়ামসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ কারখানা নির্মাণের জায়গা পেলে প্রতিবন্ধী নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

তাঁতের সূক্ষ্ম বুননের ফাঁকে গুনগুন করে গাইছেন গান, হাসি-ঠাট্টায় মাতিয়ে রাখেন চারপাশ। নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরের রানিখং এর বাসিন্দা নপালী চাম্বু গং। ময়মনসিংহ নগরীর কাঁচি-ঝুলির জয়নুল রোডের পুরনো এক বিল্ডিংয়ে ‘প্রতিবন্ধী আত্ম-উন্নয়ন সংস্থায়’ কার্পেট বুননের কাজ করেন এই তরুণী। জন্মের পর থেকেই পোলিওতে আক্রান্ত নপালী। নপালীর হতদরিদ্র পরিবার তাকে ১৩ বছর বয়সে রেখে যান এখানে। ৩৫-এ পা রাখা নপালী এখন নিজে বুনেন নান্দনিক ডিজাইনের সব কার্পেট।

কার্পেট কারিগর নপালী চাম্বু গং বলেন, ‘কাজ শিখতে ভালো লাগছে। আমি এখানে কাজ শিখে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পেরেছি। আমি কার্পেট করি, মাঝে মাঝে সেলাই এর কাজও করি। আমার করা কার্পেটের কাজ দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়।

শুধু নপালী নয়, অনেকেই আছেন যারা কথা বলতে পারেনা, কেউ কানে শোনে না, আবার কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত। কিন্তু তাদের হাতেই তৈরি হচ্ছে চোখ ধাঁধানো বাহারি ডিজাইনের কার্পেট, মেয়েদের ব্যাগসহ কারুপণ্য। ঝুট, পুরনো কাপড়, রিসাইকেল সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এইসব পণ্য তৈরি করা হয়।

২০২০ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী আত্ম-উন্নয়ন সংস্থার নিবন্ধন নেয়া হয়। এরপর ২০২২ সাল থেকে প্রতিবন্ধী নারী শেফালী আক্তারের হাত ধরে ৫ থেকে ৬ জন নারীকে নিয়ে পথচলা শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানটির। বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের সেলাই, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে এই সংস্থা। এছাড়া, ‘প্রজাপতি ক্রাফট’ নামে রয়েছে তাদের নিজস্ব শোরুম, সেখানে বিক্রি হয় হাতে তৈরি পুতুল, কার্পেট, মোমবাতিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। এসব পণ্য যাচ্ছে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জাপানসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।

একজন নারী কারিগর বলেন, ‘আমার প্রতি তিনমাস পরপর রক্ত নিতে হয়। চিকিৎসার সমস্যা ছিলো। কিন্তু এখন এখানে কাজ করে নিজের চিকিৎসা নিজেই করতে পারি।’

অপর একজন নারী কারিগর বলেন, ‘বাসায় বসে ছিলাম। চলতে পারতাম না। নাটোর থেকে এখানে এসে কাজ শিখে এখন নিজের খরচ নিজে চালাতে পারি।’

মানভেদে একেকটি কার্পেট দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া, পুতুল, আঁকা ছবি, পাটের তৈরি ব্যাগের দাম ৩শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

আরও পড়ুন:

অনলাইনের মাধ্যমে নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে পণ্যের বিভিন্ন ডিজাইনের ক্যাটালগ পাঠানো হয় বায়ারদের কাছে। বায়ারদের পছন্দ হলে অর্ডার কনফার্ম করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে, ভবনের বেহাল অবস্থার কারণে ভারি বৃষ্টিতে নষ্ট হয় মূল্যবান মালামাল।

ময়মনসিংহ প্রতিবন্ধী আত্ম-উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শেফালী আক্তার বলেন, ‘কিছু অব্যবস্থাপনা, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে আমরা কিছু পণ্য দেশের বাইরে পাঠাতে পারছি না। আবার ক্রেতারা যখন বেশি পরিমাণে পণ্য চায় তখন আমরা সেটা দিতে পারছি না।’

এদিকে, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, ‘তাদের এ কাজের প্রতি আমাদের সবসময় সহযোগিতা আছে। কি ধরনের সাহায্য প্রয়োজন সেটা তারা যদি আমাদের জানায় তাহলে আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাদের অবশ্যই সাহায্য করবো।’

প্রতিবন্ধী আত্ম-উন্নয়ন সংস্থায় বর্তমানে ২৫০ জন সদস্য রয়েছে, যাদের সবাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ।

ইএ