খেলাপিতে জর্জরিত শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় ধাপে বেসরকারি আরও ১১টি ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাই করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, বন্ধকি সম্পদসহ বিভিন্ন সূচকের প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনা শেষে একীভূতের প্রক্রিয়ায় হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডজন খানেক ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। ধার করে টিকে থাকা কোন কোন ব্যাংক আগের ঋণও পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এরইমধ্যে প্রথমে ফারমার্স পরবর্তীতে ব্যাপক কেলেঙ্কারির পর আস্থা ফেরাতে পদ্মা নাম ধারণ করেও এখনও খুড়িয়ে চলছে ব্যাংকটি। এটিসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা হয়রানির শিকার।
অর্থনীতিবিদ হেলাল আহম্মেদ খান বলেন, ‘ব্যাংকের খেলাপি ঋণসহ যতগুলো ঘটনা আমরা দেখলাম এগুলোর পেছনে মালিক, পরিচালক বা তাদের একটি প্রচ্ছন্ন যোগাযোগ কাজ করছে।’
গেলো বছর গণঅভ্যুত্থানের পর ভঙ্গুর আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর ১৪টি পর্ষদ বিলুপ্ত করা হয়। প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয় তারল্য সহায়তা। এসব পদক্ষেপে ব্যাংকগুলো থেকে ছোট অঙ্কের আমানতকারীরা কিছু অর্থ তুলতে পারলেও বড় অঙ্কের সঞ্চয় ফেরত পায়নি। বর্তমানে প্রান্তিক কোনো কোনো শাখায় কিছু কিছু দুর্বল ব্যাংক মাসে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে পারছে না গ্রাহকদের।
বিগত সরকারের সহযোগিতায় কিছু শিল্পগোষ্ঠীর অযাচিত হস্তক্ষেপ, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব বেসরকারি ব্যাংক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় অংশই চলে যায় খেলাপিদের হাতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামী ধারার বাইরে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংককেও মার্জ করা হবে। এতে লোকসানে থাকা এসব দুর্বল ব্যাংক পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশা।
বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘প্রথমেই ইসলামি ব্যাংকগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। এরপরে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কীভাবে সংস্কার করা যায় তা দেখা হবে। সেটি মার্জার হতে পারে আবার অন্য কিছুও হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞের মত, দেশে এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। অডিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার প্রয়োজন ছিল বহু আগেই। এতে ক্ষতি থেকে বাঁচবেন আমানতকারীরা।
সিএসপিএস নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘শেষের যে ফোর্থ জেনারেশন ব্যাংক হয়েছে ১৪টি এগুলো আসলে করার কথা ছিল না। সে সময় শুরু হয়েছিলো তুমুল বিতর্ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংক ভিন্ন ধারার এর সঙ্গে অন্যান্য ব্যাংকগুলো মার্জ করার সুযোগ নেই। এ দেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৪০টির নিচে নামিয়ে আনা উচিত।’
চলতি বছর মে মাসে দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইনি বাধা মেটাতে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করে সরকার। স্বচ্ছতা ফেরাতে নেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব পদক্ষেপে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।