আমদানি নির্ভর জ্বালানি, মজুত সক্ষমতায় নেই অগ্রগতি

ইস্টার্ণ রিফাইনারি
ইস্টার্ণ রিফাইনারি | ছবি: এখন টিভি
0

জ্বালানি তেলের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে মজুতের সক্ষমতা বাড়ালেও নজর নেই বাংলাদেশের। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাধলেই জ্বালানি নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ। মজুতের সক্ষমতা বাড়াতে এক যুগ আগে ইস্টার্ন রিফাইনারি– দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও ঝুলে রয়েছে প্রকল্পটি। যদিও বিপিসির চেয়ারম্যান বলছে, সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাওয়া গেছে বিদেশি অংশীদার।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসেবে, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৬৫ লাখ টন। একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার- ইস্টার্ন রিফাইনারি তেল আমদানি করে পরিশোধন করতে পারে মাত্র ১৫ লাখ টন। বাকিটা পরিশোধিত আমদানি করতে হয় বিপিসিকে।

জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়লেও ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৭ বছরেও ইআরএল এর সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। উৎপাদন বাড়াতে ২০১২ সালে সরকার ইস্টার্ন রিফাইনারির ইউনিট- টু করার উদ্যোগ নিলেও এক দশক ধরে ঝুলে রয়েছে প্রকল্পটি। ২০১৫ সালে প্রথম ইউনিটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বিপিসি। ওই বছরেই ফরাসি কোম্পানিটি কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবনা জমা দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইআরএলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা তিনগুণ বেড়ে ৪৫ লাখ টন হতো।

মজুতের সক্ষমতা কম থাকায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়লেও বা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বাধলে জ্বালানি তেল নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে। এর মধ্যে সৌদি আরব ও কাতারের জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কোম্পানি এ আগ্রহ দেখালেও ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের অর্থায়নে প্রকল্পটি করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার পতনের পর প্রকল্পটি স্থগিত হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বিপিসি নতুন করে প্রকল্পটি সচল করে। যদিও এরই মধ্যে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় ইউনিট থাকলে কম দামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে পরিশোধন করতে পারতো ইস্টার্ন রিফাইনারি। এতে সাশ্রয়ী দামে জ্বালানি পেত মানুষ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম বলেন, ‘রিফাইন অয়েল আমদানি করলে প্রচুর পরিমাণে ব্যয় বেড়ে যায়। রিফাইন অয়েল আমদানি করলে লাভ হয় কনট্রাকটরদের। সরকারের মধ্যে একটা ক্রিয়াশীল শক্তি বা একটা গোষ্ঠী লাভবান হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলারা বিভিন্নভাবে লাভবান হয়। যে কারণে সে অবস্থাটা ভেঙে এ রকম একটা ব্যবস্থা তৈরি করার দিতকে অনীহা ছিল।’

যদিও বিপিসি চেয়ারম্যান বলছেন, প্রকল্পের নকশা ও জমি সব কিছু প্রস্তুত থাকলেও সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বিপিসির একার করা সম্ভব নয়। প্রকল্পে অর্থায়নে বিনিয়োগ অংশীদার পাওয়া গেছে। খুব দ্রুত তা চূড়ান্ত হবে। যদিও বিদেশি বা বেসরকারি খাতে না দিয়ে সরকারি অর্থায়নে জ্বালানি খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞের।

বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ‘সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পকে লক করা বা এটাকে ফিক্সড করে ফেলা কিন্তু আসলে চট করে হয়ে যায় না। এটার জন্য অনেক অ্যাফোর্ট লাগে, সময়ও লাগে।’

এম শামসুল আলম বলেন, ‘প্রতিযোগিতা বিহীন বিনিয়োগ আহ্বান করা আর এরকমভাবে সো কলড প্রতিযোগিতা আহ্বান করে বিনিয়োগকারী সিলেকশন করা। আসলে লক্ষ্য উদ্দেশ্য একটাই থাকলে এই প্রতিযোগিতা আসলে লোক দেখানো, লোক ঠকানো।’

ইআরএল–২ হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির । ইউরো-৫ স্ট্যান্ডার্ড হওয়ায় এতে পরিশোধিত তেলের মান হবে অনেক ভালো, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।

আমিন উল আহসান বলেন, ‘এখন আমরা যে তেলটা আনি, সেটাতে আমাদের স্পেসিফিকেশনে থাকে যে ৫০ পিপিএম সালফার থাকতে পারবে সর্বোচ্চ। মরা যেটা করবো সেখানে ১০ পিপিএমেরও কম সালফার থাকবে। মানে এটা খুবই ভালো। আমাদের পরিবেশের জন্য ভালো হবে।’

ইআরএল–টু হলে তেল আমদানি খরচ কমার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে পেট্রোলিয়ম পণ্য যেমন- গ্যাসোলিন, জেট ফুয়েল, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিনের উৎপাদন বাড়বে। ইস্টার্ন রিফাইনারির ৫৭ বছরে ইতিহাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন তেল পরিশোধন করেছে।

এসএস