মার্কিন শুল্ক চাপে আকাশপথে বেড়েছে পণ্য রপ্তানি, বেড়েছে বিমানের ভাড়া

এয়ারলাইন্সে পণ্য রপ্তানি
এয়ারলাইন্সে পণ্য রপ্তানি | ছবি: এখন টিভি
0

রাজস্ব কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক শাটডাউন কর্মসূচি আর মার্কিন শুল্ক চাপে আকাশপথে বেড়েছে পণ্য রপ্তানি। এ সুযোগে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ বিমানসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। কিছু রুটে এক মাসেই বিমানের ভাড়া বেড়েছে তিন দফা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন কাঁচাপণ্য রপ্তানিকারকরা। বাজার হাতছাড়া হচ্ছে ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভিয়েতনামসহ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর কাছে। যদিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দাবি অন্য সংস্থার তুলনায় তাদের ভাড়া এখনও কম।

সাধারণত সমুদ্রপথেই জাহাজে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রপ্তানি সম্ভব না হলে বা ক্রেতার নির্দেশনা থাকলে বিমানে পণ্য পাঠান রপ্তানিকারক।

সম্প্রতি কাস্টম কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচি ও সার্ভারের সমস্যার কারণে পণ্য শিপমেন্ট ব্যাহত হয়। সময়মতো কাঁচামাল হাতে না পাওয়ায় অনেক রপ্তানি পণ্য যথা সময়ে জাহাজীকরণ হয়নি। সেইসঙ্গে ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তি শুল্ক গুণতে হবে। তাই খরচ বেশি হলেও অর্ডার ধরে রাখতে আকাশপথে পণ্য পাঠাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। এক্ষেত্রে বাড়তি চাপের অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্স।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আগে দিতে পারেনি সেক্ষেত্রে বায়ার বলছে পণ্য নিবো না বা আমাদেরকে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিতে হবে। ওই টাইম ধরার জন্য আমাদেরকে শিপিং থেকে এয়ারে যেতে হচ্ছে। যদি এয়ার ভাড়া না বাড়িয়ে আমাদের দিকে একটু দেখে সেটাই আমরা অনুরোধ করেছি।’

গ্রীষ্ম মৌসুমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আম-কাঁঠালসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল ও সবজির বাড়তি চাহিদা থাকে। রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, পোশাকখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও সবজির জন্য জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছে না বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলা। বাংলাদেশ বিমানই ভরসাস্থল। এ অবস্থায় জুলাই মাসেই দুবাই রুটে তিন দফা ভাড়া বাড়িয়েছে বিমান।

চট্টগ্রাম ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান রুবেল বলেন, ‘৫০ সেন্ট বিমান ভাড়া চট্টগ্রামে বেড়ে গিয়েছে। ৫০ সেন্ট মানে বাংলা টাকায় প্রায় ৬২ টাকা পড়ে। তাহলে ১ কেজি সবজিতে যদি ৬২ টাকা বিমান ভাড়া বেড়ে যায় তাহলে ১ হাজার কেজিতে ৬২ হাজার টাকা বেড়ে যাচ্ছে। তার প্রভাব আমাদের বায়ারের উপর পড়ছে। এমন না যা আমাদের তেলের দাম বেড়েছে। কোন যুক্তিতে আমাদের বিমান ভাড়া বাড়লো তারা।’

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, অল্প সময়ের ব্যবধানে এতো বেশি ভাড়া বাড়ানোয় বিমুখ হচ্ছেন ক্রেতা। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালে বিমান ভাড়া অনেক কম হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।

ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, ‘কানাডা-লন্ডনে এক কেজি আম বা সবজি রপ্তানি করলে বিমান ভাড়া লাগে ৭০০ টাকা। সেটা ভারত রপ্তানি করে বাংলা টাকায় ৩৫০ টাকায়। সরকারের কাছে অনুরোধ বিমান ভাড়া যেন কমিয়ে দেই।’

তবে বিমানের ভাড়া এখনও অনেক কম দাবি করে বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারিত হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগ মহাব্যবস্থাপক এ বিএম রওশন কবির বলেন, ‘প্রতিদিন আমি পরিবহন করতে পারি ২৬ টন। এখন আমার কাছে ৬০ টন পণ্য আসে তাহলে আমি তো সবাইকে নিতে পারবো না। আমাদের বিমানের যে ভাড়া তা অন্য বিমান কোম্পানি থেকে কম।’

বর্তমানে বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়। সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ শত কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে।

সেজু