রাকসু নির্বাচন চেয়ে ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এরপর চলতি বছরের শুরুতে এজন্য কমিটি গঠন করা হলেও তৈরি হয় নানা জটিলতা। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া এপ্রিল-মে মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ঘোষণা হয়নি ভোটার তালিকা ও তফসিল।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যেসব বিষয় ছিলো যেগুলো নিয়ে একটু দেরি করা যায় এসব নিয়ে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই, কোনো সদিচ্ছা নেই। সে জায়গা থেকে আমাদের এটা টালবাহানা মনে হচ্ছে।’
রাকসু নির্বাচন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এরপর কেটে গেছে প্রায় সাড়ে তিন দশক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাকসু শুধু নির্বাচন নয় এটি মতপ্রকাশ ও অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক মাধ্যম।
রাবি শিক্ষার্থী অনিক বলেন, ‘যদি এখানে ছাত্র সংসদ চালু থাকতো, তাহলে ছাত্রদের যে যৌক্তিক দাবিগুলো, চাওয়া পাওয়াগুলো তারা সহজেই পূরণ করতে পারতো।’
১৯৬৩ সালে গঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ২৬টি নির্বাচন হলেও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে না বলে জানান এই শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সম্পূর্ণ দায় যেটা যায় সেটা হলো এখন পর্যন্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি, তফসিল ঘোষণা করা হয়নি এ দায়টা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পড়ে। আমরা মনে করি তারাই আসলে চাচ্ছে না, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু হোক। তাদেরই সদিচ্ছা নেই। রাকসু যে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একটি কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম এ সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থী সচেতন নয়। এজন্য আমরা পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি করছি।’
ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলছেন, রাকসু সচল না হলে প্রশাসনের একক কর্তৃত্বেই চলবে সবকিছু, শিক্ষার্থীরা থাকবে উপেক্ষিত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীসহ আমরা যে দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রোডম্যপ অনুযায়ী তফসিল না হওয়ায় এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হওয়ায় এটা সত্যিই আমাদের জন্য হতাশাজনক।’
রাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে কাজ চলছে।’
রাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘রাকসু ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক দিনের একটা কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এটা যদি কার্যকর করতে পারি তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে যে সন্দেহ অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তা দূর করতে পারবো।’
তবে গঠনতন্ত্র, তফসিল এবং নির্বাচন কবে হবে এ নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু না জানালেও দ্রুত সময়ে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান রাবি উপাচার্য।
রাবি উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘প্রতিদিনই নতুন নতুন ফ্যাক্টর আসছে। সেগুলোকে এডজাস্ট করেই আমাদের এগুতে হচ্ছে। এবং এতে করে একটা দীর্ঘসূত্রিতা এবং বিলম্ব তৈরি হচ্ছে। এ অভিযোগ আমি পুরোপুরি স্বীকার করি। প্রতিদিনই আমাকে জট খুলতে হচ্ছে। জট খুলতে খুলতেই আমরা এগোচ্ছি।’