চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হলেও কুমিল্লা বোর্ডে সৃষ্টি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। খারাপ ফলাফলের কারণে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের ৪৭০টি কলেজ। ছয় জেলায় বোর্ডভুক্ত কলেজে রয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬০টি আসন।
তবে ২০২৫ সালের এসএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র এক লাখ ৬ হাজার ৫৮১ জন। এদিকে প্রতি বছরের মতো প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী বোর্ড পরিবর্তন করলে এ বছর দেড় লাখের বেশি আসন শূন্য থেকে যাবে। এছাড়া শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে অনেক কলেজ।
তবে এত আসন খালি থাকার কথা থাকলেও একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছেন না। প্রতিদিন বোর্ডে আসছেন ভর্তির প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে। পছন্দের কলেজে আবেদনের আগেই কে বা কারা আবেদন সেরে ফেলছেন— এতে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি কুমিল্লা বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন আমি কলেজের আবেদন করতে গেলে দেখাচ্ছে, আবেদন এরই মধ্যে হয়ে গেছে।’
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের স্কুল এবং কলেজ একইসঙ্গে। সেজন্য এসএসসি পরীক্ষার পর স্যাররা বলছেন, এই প্রতিষ্ঠানেই পড়তে হবে। আমাদের আবেদনের কোনো সুযোগ দেননি। তারা স্কুল থেকেই আবেদন করে ফেলেছে।’
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড বলছে, ২০২১ সালে ২ লাখ ১১ হাজার শিক্ষার্থী পাস করলেও ৫ বছরে তা নেমেছে অর্ধেকে। শিক্ষার্থী সংকটে পড়া কলেজগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে মন্ত্রণালয়। এছাড়া একজনের আবেদন অন্যজন করে ফেলছে এমন অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান কর্তকর্তারা।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. নূরুন্নবী আলম বলেন, ‘এই যে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮১ জন পাস করলো, এদের সবাই কিন্তু কলেজে ভর্তি হবে না। ড্রপ-আউট হবে, কিছু ঢাকায় চলে যাবে বা অন্য বোর্ডের অধীনে চলে যেতে পারে। এ কলেজগুলো যখন স্থাপন করেছে, পাঠদান অনুমতি পেয়েছে, তখন শিক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ১১ হাজার, এখন সেটা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসছে। এই কলেজগুলো রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামসুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য কেউ ইন্টেনশনালি যদি কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে আবেদন করে ফেলে, তাহলে সে আমাদের এ বোর্ডে ফোনের মাধ্যমেই এটার সমাধান করতে পারবে, এখানে আসতে হবে না। যারা কাছাকাছি আছে, তারা এসে সরাসরিও এটা করতে পারবে। তারা আগের আবেদন বাতিল করে নতুন আবেদন করতে পারবে।’
তবে শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থী সংকট ঠেকাতে মরিয়া অনেক কলেজ। নানা উপায়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহের অপতৎপরতার অভিযোগ থাকলেও যেসব কলেজ মানসম্পন্ন পাঠদান করাচ্ছে তাদের সংকট হবে না বলছেন শিক্ষকরা।
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মাসউদ বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, শহর-মফস্যল লেভেল প্লেয়িং পরীক্ষার ফিল্ড। এ বছর কুমিল্লা বোর্ড সেই ব্যবস্থা-ই নিয়েছে। আগে পারা যেত না রাজনৈতিক চাপে। এ বছর প্রকৃত ফলাফল উঠে এসেছে এবং শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে হলে এমনই করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কখনোই শিক্ষার্থী সংকট হবে না।’
কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পারে এবং তারা যেন মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে পারে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- বুয়েট-মেডিকেলে চ্যান্স পেতে পারে, সেজন্য ভালো পড়াশোনা যেখানে হয়—সেটা ভেবে তাদের প্রতিষ্ঠান বাছাই করা দরকার।’
চলতি বছর কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ৬০, যা ২০২১ সালে ছিল ৯৬ দশমিক ২৭।