রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারে বাধা দিচ্ছে বিএনপি—ডাকসুর অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) | ছবি: বিবিসি বাংলা
1

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার কার্যকর করার পথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিক বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করছে—এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)। গতকাল (রোববার, ২ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ডাকসু নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, বিএনপি মূলত ‘জুলাই বিপ্লবের’ চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিদ্রোহ। এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।

ডাকসুর অভিযোগ, বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত, বিএনপি সেসব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করছে, যা ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

ডাকসুর বিবৃতি অনুযায়ী, বিএনপি যেসব সংস্কারের বিরোধিতা করেছে তার মধ্যে রয়েছে, পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাব, বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থার কাঠামো পরিবর্তন এবং জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন গঠন।

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

ডাকসুর বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দেবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে গণভোটকেই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছে ছাত্র সংসদ। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দেবে।

ডাকসু চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্র গঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে। কারণ জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ইএ