এক নজরে: নতুন বাইক কেনার চেকলিস্ট
- বাইকের মূল দামের পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন, ইন্স্যুরেন্স এবং সেফটি গিয়ারের (হেলমেট, গ্লাভস) জন্য অতিরিক্ত খরচ হিসেবে রাখুন।
- প্রতিদিনের যাতায়াত বা সিটি রাইডিংয়ের জন্য কমিউটার বাইক (Commuter Bike) এবং দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য ট্যুরিং বা স্পোর্টস বাইক (Touring/Sports Bike) নির্বাচন করুন।
- নিজের রাইডিং অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ইঞ্জিন সিসি (Engine Displacement) বেছে নিন।
- প্রতি লিটার জ্বালানিতে বাইকটি কত কিলোমিটার যাবে বা এর ফুয়েল এফিসিয়েন্সি (Fuel Efficiency) সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিন।
- জরুরি অবস্থায় নিরাপদ ব্রেকিংয়ের জন্য এবিএস (ABS) বা সিবিএস (CBS) ব্রেকিং সিস্টেম সমৃদ্ধ বাইককে অগ্রাধিকার দিন।
- আপনার উচ্চতা অনুযায়ী বাইকের সিট হাইট (Seat Height) এবং বসার ভঙ্গি আরামদায়ক কি না তা নিশ্চিত করুন।
- পছন্দের মডেলটির জেনুইন পার্টস (Genuine Spare Parts) আপনার হাতের নাগালে পাওয়া যায় কি না জেনে নিন।
- আপনার এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার (Authorized Service Center) আছে কি না তা যাচাই করুন।
- ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাইকটি একবার টেস্ট রাইড (Test Ride) দিয়ে এর ভাইব্রেশন ও হ্যান্ডলিং পরখ করে নিন।
- ভবিষ্যতে বাইকটি বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে কি না, অর্থাৎ এর বাজার চাহিদা (Market Demand) কেমন তা বিবেচনা করুন।
ব্যবহারের উদ্দেশ্য নির্ধারণ (Identify Your Riding Purpose)
প্রথমেই ঠিক করুন আপনি বাইকটি কেন কিনছেন। আপনি কি প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের জন্য কমিউটার বাইক (Commuter Bike) খুঁজছেন, নাকি উইকেন্ডে লং ট্যুরের জন্য ট্যুরিং বাইক (Touring Bike) পছন্দ? শহরের জ্যামে চালানোর জন্য হালকা ও বেশি মাইলেজ সমৃদ্ধ বাইক ভালো, কিন্তু হাইওয়ের জন্য প্রয়োজন ভালো ওজন ও উচ্চ সিসি ইঞ্জিন (High CC Engine) সম্পন্ন বাইক।
আরও পড়ুন:
বাজেট ও আনুষঙ্গিক খরচ (Budget and Hidden Costs)
বাইকের শুধু শোরুম মূল্যের দিকে তাকালে ভুল করবেন। বাইকের মূল দামের সাথে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন ফি (Bike Registration Fee), বিমা বা ইন্স্যুরেন্স (Motorcycle Insurance) এবং রোড ট্যাক্সের খরচ যোগ করতে হবে। এছাড়া ভালো মানের হেলমেট (Certified Helmet) ও সেফটি গিয়ার কেনার জন্য আলাদা একটি বাজেট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
বাইকের ধরণ (Bike Type and Engine CC)
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাইকের ধরণ (Types of Motorcycles) নির্বাচন করুন। শহরে যাতায়াতের জন্য কমিউটার বাইক (Commuter Bike) সেরা, আর লং ট্যুরের জন্য স্পোর্টস বাইক (Sports Bike) বা ক্রুজার বাইক (Cruiser Bike) বেছে নিতে পারেন। এছাড়া ইঞ্জিনের সিসি বা ক্ষমতা (Engine Displacement/CC) আপনার রাইডিং দক্ষতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:
ইঞ্জিনের ক্ষমতা ও প্রযুক্তি (Engine Performance and Technology)
ইঞ্জিনের কিউবিক ক্যাপাসিটি বা সিসি (Engine Displacement/CC) বাইকের শক্তি নির্ধারণ করে। তবে সিসি-র পাশাপাশি ইঞ্জিনটি এয়ার কুলড (Air Cooled) নাকি লিকুইড কুলড (Liquid Cooled) তা দেখে নিন। লিকুইড কুলড ইঞ্জিন দীর্ঘক্ষণ রাইডিংয়ের সময় ইঞ্জিনকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আধুনিক ফুয়েল ইনজেকশন বা এফআই প্রযুক্তি (Fuel Injection/FI Technology) জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে।
ফুয়েল এফিসিয়েন্সি বা মাইলেজ (Fuel Efficiency and Mileage)
জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজারে বাইকের মাইলেজ (Bike Mileage) একটি বড় ফ্যাক্টর। কেনার আগে অবশ্যই জেনে নিন বাইকটি প্রতি লিটারে কত কিলোমিটার যাবে। বেস্ট মাইলেজ বাইক (Best Mileage Bikes) দীর্ঘ মেয়াদে আপনার খরচ কমিয়ে দেবে।
ব্রেকিং সিস্টেম ও নিরাপত্তা (Braking System and Safety Features)
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো আপস করা উচিত নয়। বর্তমানে আধুনিক বাইকগুলোতে এন্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (Anti-lock Braking System/ABS) ব্যবহার করা হয়, যা জরুরি ব্রেকিংয়ের সময় চাকা লক হতে দেয় না। আপনার বাজেট কম হলে অন্তত কম্বি ব্রেকিং সিস্টেম (Combi Braking System/CBS) যুক্ত বাইক কিনুন। এছাড়া চাকার টায়ার গ্রিপ (Tyre Grip and Width) এবং চ্যাসিসের মজবুত গঠন যাচাই করে নিন।
আরাম ও সিটিং পজিশন (Comfort and Ergonomics)
বাইকটি চালিয়ে আপনি কতটুকু আরাম পাবেন তা নির্ভর করে এর সিটিং পজিশন (Sitting Position) ও হ্যান্ডেলবার উচ্চতার ওপর। আপনার উচ্চতা অনুযায়ী বাইকের সিট হাইট (Seat Height) ঠিক আছে কি না তা যাচাই করুন। শোরুমে গিয়ে বাইকে বসে এর হ্যান্ডলিং (Bike Handling) পরীক্ষা করে দেখুন।
আরও পড়ুন:
বিক্রয় পরবর্তী সেবা ও পার্টস (After Sales Service and Spare Parts)
বাইক কেনার আগে ওই ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টার (Authorized Service Center) আপনার আশেপাশে আছে কি না যাচাই করুন। এছাড়া বাজারে ওই মডেলের খুচরা যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা (Availability of Spare Parts) নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
টেস্ট রাইড ও রিভিউ (Test Ride and Expert Reviews)
পছন্দের বাইকটি কেনার আগে একবার টেস্ট রাইড (Test Ride) দিয়ে দেখুন এর সিটিং পজিশন ও হ্যান্ডলিং আপনার জন্য আরামদায়ক কি না। পাশাপাশি ইন্টারনেটে ইউজার রিভিউ (Bike User Reviews) দেখে নিতে পারেন।
বাংলাদেশে ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে পারফরম্যান্স, মাইলেজ এবং জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে সেরা কয়েকটি বাইকের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
কমিউটার ও মাইলেজ বাইক (৮০ সিসি - ১২৫ সিসি)
যারা মূলত যাতায়াত খরচ কমাতে চান এবং ভালো মাইলেজ খুঁজছেন:
- বাজাজ সিটি ১০০ (Bajaj CT 100): কম দামে সেরা মাইলেজের জন্য পরিচিত।
- টিভিএস মেট্রো প্লাস (TVS Metro Plus): টেকসই ইঞ্জিন এবং ভালো লুক।
- হোন্ডা লিভো (Honda Livo): ১২৫ সিসির মধ্যে অন্যতম স্টাইলিশ এবং আরামদায়ক বাইক।
- হিরো স্প্লেন্ডার প্লাস (Hero Splendor+): মধ্যবিত্তের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বাইক।
পপুলার ১৫০ - ১৬৫ সিসি সেগমেন্ট (বাজেট ফ্রেন্ডলি ও স্টাইলিশ)
এই সেগমেন্টের বাইকগুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়:
- বাজাজ পালসার এন১৬০ (Bajaj Pulsar N160): এর ডুয়াল চ্যানেল এবিএস এবং লুক বর্তমানে বাজারে শীর্ষে।
- টিভিএস অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ ৪ভি (TVS Apache RTR 160 4V): হাই-টেক ফিচার এবং দারুণ পিক-আপের জন্য জনপ্রিয়।
- হিরো থ্রিলার ১৬০আর (Hero Thriller 160R): মাসকুলার ডিজাইন এবং ভালো কন্ট্রোলিং।
- সুজুকি জিক্সার (Suzuki Gixxer SF): স্টাইলিশ ফুল ফেয়ারিং লুকের জন্য পরিচিত।
প্রিমিয়াম ও স্পোর্টস বাইক (১৫০ - ১৬৫ সিসি)
যারা পারফরম্যান্স এবং প্রিমিয়াম ফিল চান:
- ইয়ামাহা আর১৫ ভার্সন ৪ (Yamaha R15 V4): বাংলাদেশের স্পোর্টস বাইক প্রেমীদের স্বপ্নের বাইক।
- ইয়ামাহা এমটি ১৫ (Yamaha MT-15 V2): স্ট্রিট ফাইটার লুক এবং পাওয়ারফুল ইঞ্জিন।
- সুজুকি জিএসএক্স-আর ১৫৫ (Suzuki GSX-R 155): এই সেগমেন্টের অন্যতম দ্রুতগতির বাইক।
স্কুটার (মেয়েদের ও শহরের রাইডারদের জন্য)
- টিভিএস জুপিটার (TVS Jupiter): ব্যবহার করা সহজ এবং বেশ আরামদায়ক।
- ইয়ামাহা ফাসিনো (Yamaha Fascino): স্টাইলিশ এবং প্রিমিয়াম লুক।
- সুজুকি এক্সেস ১২৫ (Suzuki Access 125): দারুণ পারফরম্যান্স এবং শক্তিশালী ইঞ্জিন।
বাংলাদেশে বর্তমানে আলোচিত প্রিমিয়াম বাইকসমূহ
সিসি লিমিট শিথিল হওয়ার পর বাংলাদেশের বাজারে এখন ৩৫০ সিসি পর্যন্ত বাইক দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে রয়্যাল এনফিল্ড (Royal Enfield) আসার পর থেকে দেশের বাইকিং কালচারে বড় পরিবর্তন এসেছে। আপনার পছন্দের তালিকায় থাকা জনপ্রিয় উচ্চ সিসির বাইকগুলো একনজরে দেখে নিন:
- রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০ (Royal Enfield Classic 350): এর সিগনেচার রেট্রো লুক এবং ভাইব্রেশনহীন রাইডিংয়ের জন্য এটি বর্তমানে দেশের এক নম্বর ক্রেজ।
- রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০ (Royal Enfield Bullet 350): যারা আভিজাত্য এবং রাজকীয় ভাব পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি সেরা পছন্দ।
- রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০ (Royal Enfield Hunter 350): তরুণ প্রজন্মের জন্য একটু কমপ্যাক্ট এবং স্টাইলিশ ক্যারেক্টারের বাইক।
- রয়্যাল এনফিল্ড মেটিও ৩৫০ (Royal Enfield Meteor 350): যারা আরামদায়ক ক্রুজার বাইক পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি সেরা।
- হিরো কারিজমা এক্সএমআর ২১০ (Hero Karizma XMR 210): আধুনিক ফিচার এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সাথে দেশের বাজারে ফিরছে জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ড।
- বাজাজ পালসার এন ২৫০ (Bajaj Pulsar N250): শক্তিশালী ইঞ্জিনের সাথে মাসকুলার ডিজাইনের জন্য পরিচিত।





