যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কে বিপাকে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক খাত, বিকল্প বাজারে নজর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান | ছবি: সংগৃহীত
0

যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তির কারণে বিপাকে পড়েছে ইন্দোনেশিয়ার পোশাক শিল্প। নতুন ১৯ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় নতুন বাজার খুঁজছেন গার্মেন্টস মালিকরা।

৬২ বছর বয়সী ডেডি মুলিয়াদি প্রায় ২৭ বছর ধরে কাজ করছেন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি পোশাক কারখানায়। দেশটির অন্যান্য বড় পোশাক কারখানার মতো এটিও এতদিন ধরে আমেরিকার স্বনামধন্য এইচএন্ডএম, জারা এবং আমেরিকান ঈগলসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডে তৈরি পোশাক সরবরাহ করে আসছে।

কিন্তু তিন দশকের মধ্যে ডেডি এখন সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ট্রাম্পের শুল্কারোপে ধাক্কা খেয়েছে তার মতো রপ্তানি নির্ভর কারখানাগুলো। জানান, তার কারখানার ৮০ শতাংশ পণ্য যেতো আমেরিকায়। কিন্তু শুল্ক চুক্তির পর বেশিরভাগ ক্রেতাই পোশাক কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

জেনারেল ম্যানেজার ডেডি মুলিয়াদি বলেন, ‘আমাদের হিসাব নিকাশ উলট পালট হয়ে যাচ্ছে। এই শুল্ক যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের সাধারণ বাজারেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।’

ইন্দোনেশিয়ার পরিসংখ্যার ব্যুরো'র তথ্যমতে, দেশটির গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে দেশটির তৈরি পোশাক শিল্পের ৫১ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। জুলাইয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। ফিলিপিন্সের ওপরও একই হারে শুল্কারোপ করা হয়। আর ভিয়েতনামের পণ্যে ধরা হয় ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক।

ডেডি মুলিয়াদি বলেন, ‘আমাদের পণ্যের দাম পার্শ্ববর্তী দেশগুলো চেয়ে কম হলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহী হবে। এশিয়ায় যদি আমাদের ওপরই সবচেয়ে কম শুল্ক আরোপ করা হয় তাহলে সেটি হবে আমাদের সুযোগ।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় শুল্ক কম হওয়ায় অবশ্যই ইন্দোনেশিয়ার জন্য অনেক বড় সুযোগ। তবে সতর্ক থাকতে হবে।

বাণিজ্য বিশ্লেষক অ্যান্ড্রি সাতরিও বলেন, ‘যেখানে অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেখানে ৩২ থেকে ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা সত্যিই ভালো। এতে অনেক স্বস্তি মিলছে। তবে আমাদের শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল থাকলে হবে না। আমাদের দ্রুত অন্যান্য উন্নত দেশে ক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে।’

জেনারেল ম্যানেজার ডেডি মুলিয়াদি বলেন, ‘রাশিয়া, স্পেন, জাপান ও ইউরোপে হতে পারে আমাদের পরবর্তী টার্গেট। বাণিজ্য যুদ্ধের নতুন এই বাস্তবতায় শুধু ইন্দোনেশিয়াই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোকেও নিতে হচ্ছে কৌশলগত সিদ্ধান্ত। নতুন বাজারের খোঁজে নামতে হচ্ছে অনেক উদ্যোক্তাকেই।’

ইএ