ফিলিস্তিনি মায়েদের একজন বলেন, ‘এক বা দু'জন শহীদ নয়। পুরো পরিবার চলে গেলো। আল্লাহকে বলছি, ধৈর্য দাও। আমার প্রিয় মোহাম্মদ, ওকে একটু একটু করে বড় করেছি। আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে।’
আরেকজন বলেন, ‘আমার ছেলেকে ৫৮০টা দিন আমি দেখিনি। ৫৮০টা দিন ওর কণ্ঠ শুনিনি। আর কোনো মাকে যেন আমার মতো যন্ত্রণা সহ্য করতে না হয়।’
সীমান্তের দু'পাশে দু'জন মা। একজন চোখের সামনে ছেলে, নাতিসহ পুরো পরিবারের নির্মম মৃত্যুর সাক্ষী, সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব ফিলিস্তিনি নারী। অন্যজন, ইসরাইলি মা যিনি দেড় বছর ধরে সন্তানকে চোখে না দেখলেও অন্তত এটুকু জানেন যে সন্তান বেঁচে আছে, আশায় আছেন, একদিন সন্তান ফিরবে।
ফিলিস্তিনি মায়েদের আরেকজন বলেন, ‘ছেলেকে প্রথমে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো, তারপর বলবো যে ওকে আমি ভালোবাসি। এটাই ওর জন্য জানা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি যে আমরা ওকে ভালোবাসি।’
কোন দাঁড়িপাল্লায় মেপে বলা সম্ভব যে সন্তানের সাথে বিচ্ছেদ কোন মাকে কাঁদিয়েছে বেশি? দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ নতুন কিছু না হলেও আগ্রাসন চালানো ইসরাইলের জন্য অবশ্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলায় নিহত হয় ১২০০। অপহৃত অর্ধশতাধিক এখনও বন্দি। দেড় বছর ধরে ইসরাইলি মায়েরা অপেক্ষায় সন্তান ফেরার।
আরো পড়ুন:
মায়েদের আরেকজন বলেন, ‘প্রতিটা দিন চরম নির্যাতন করা হয় আমার ছেলেকে। ওকে না খাইয়ে রাখা হয়েছে। পায়ে শেকল বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত সে, সারা দেহে, চোখে শার্পনেলসের আঘাত, এক চোখে দেখতে পায় না। ভয়াবহ আহত সে।’
অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ গেছে প্রায় ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনির, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। মধ্যপ্রাচ্যে এই নির্মমতার মধ্যেই প্রতি বছরের মতো মে মাসের দ্বিতীয় রোববার উদযাপিত হলো বিশ্ব মা দিবস।
সারা বিশ্বে মায়েদের ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর অবদানের স্বীকৃতির দিন এটি। দেশে দেশে সন্তানেরা মায়েদের প্রতি এদিন ভালোবাসা জানালেও দৃশ্যপট ভিন্ন গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে। কখনো সন্তানের মৃত্যুতে, কখনো ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে অপুষ্ট, ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারা ফিলিস্তিনি মায়েদের হাহাকারে কান পাতা দায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়।
সুস্থ পরিবেশে সন্তানকে বড় করার চিন্তা তো দূর, যুদ্ধ-সংঘাতে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখাই দায় ফিলিস্তিনি মায়েদের জন্য। কয়েক দশকের ইসরাইলি আগ্রাসনে খালি হয়েছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি মায়ের বুক।
বাকিদের সন্তান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে রাষ্ট্রহীন নাগরিক হয়ে। নিজ দেশে কিংবা ভিন দেশে শরণার্থী হয়ে বেঁচে থাকা লাখো ফিলিস্তিনির জন্মলগ্ন থেকেই অনিশ্চয়তাই জীবনের একমাত্র নিশ্চয়তা।