ওভাল অফিসে রামাফোসাকে হেনস্তা করলেন ট্রাম্প

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

জেলেনস্কির পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে ডেকে এনে রীতিমতো তুলোধুনো করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেতাঙ্গ গণহত্যার অভিযোগ তোলেন তিনি। বৈঠকে অভিযোগের পক্ষে নানা তথ্য-প্রমাণও তুলে ধরেন ট্রাম্প। যদিও এসময় ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট।

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো আবারো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ওভাল অফিসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে ডেকে এনে অপমানের চেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

বুধবার দুই নেতার বৈঠকে দক্ষিণ আফ্রকায় ৬০ শেতাঙ্গ কৃষককে হত্যার অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। এ নিয়ে রামাফোসাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে অপমানজনক দৃশ্যপট তৈরি করেন তিনি। পেশ করেন শেতাঙ্গ গণহত্যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কিছু কাটিং ও ভিডিও প্রতিবেদন।

তবে ট্রাম্পের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে যথাযথ যুক্তিতর্কও তুলে ধরেন তিনি।

বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের অন্যতম। তবে হত্যাকাণ্ডে নিহত বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ, শেতাঙ্গ নয়। তাই রামাফোসার বিরুদ্ধে তোলা ট্রাম্পের অভিযোগকে গ্রহণযোগ্য নয় বলছেন বিশেষজ্ঞারা।

মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষক ক্যারোলিন হোমস বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় শেতাঙ্গ কৃষক ও অন্যান্য শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গরাই বেশি সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হন। বিশেষ করে যারা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ ও সেখানে থাকা আন্তর্জাতিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে এমনটাই উঠে এসেছে।’

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। দেশটির জন্য জরুরি মার্কিন সহায়তা ইউএস এআইডি বাতিল ঘোষণা, শেতাঙ্গ সংখ্যালঘু আফ্রিকানদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারও করেন তিনি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার গণহত্যার মামলার কঠোর সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এতকিছুর পরও ট্রাম্পকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রামাফোসা। বাণিজ্য, ট্যারিফ ও খনিজ সম্পদ ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চান তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে দু'দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে আশা করছি।’

১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় শেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অবসান ঘটে। তবুও দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গদের চেয়ে শ্বেতাঙ্গদের জীবনমান অনেক উন্নত। দেশটির প্রায় ৬২ শতাংশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শেতাঙ্গ। এরপরও প্রায় ৭০ হাজার শেতাঙ্গ ট্রাম্পের ডাকে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সেজু