বছরের প্রথম দাবদাহেই হাঁসফাঁস করছে যুক্তরাজ্য। সোমবার (৩০ জুন) লন্ডনে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। আজ (মঙ্গলবার, ১ জুলাই) আরও এক ডিগ্রি বাড়তে পারে বলে আভাস রয়েছে। গরমে সারা দেশে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি বুধবার পর্যন্ত।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘ভীষণ গরম! অবশ্যই পরিস্থিতি বেশ কঠিন। একদমই বাতাস নেই বলে বেশি খারাপ লাগছে।’
পুরো ইউরোপ মহাদেশেই চড়ছে তাপমাত্রার পারদ। তীব্র গরমে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে আর অস্ট্রিয়া। চলতি সপ্তাহে জার্মানিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াবে বলে শঙ্কা রয়েছে। বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, এমনকি নেদারল্যান্ডসের মতো গরমে অনভ্যস্ত দেশগুলোতেও অস্বস্তি চরমে। আইবেরিয়ান উপদ্বীপ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে আগেই।
দু'দিন আগেই, ১৯৬৫ সালের রেকর্ড ভেঙে জুনের নতুন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে পর্তুগাল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ডটি ছিল ২০১৭ সালে, ৪৫ ডিগ্রিরও কম। গরমের তীব্রতায় ১৮ অঞ্চলের মধ্যে সাতটি, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাতে জারি রয়েছে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা রেড অ্যালার্ট।
বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘অনেক পানি পান করছি। এটাই মূল করণীয়। ট্যাক্সিতে বেশি চলাচল করছি। পারতপক্ষে হাঁটছি না। ট্যাক্সি বা ট্রামে উঠছি।’
ইতিহাসের উষ্ণতম জুন মাস রেকর্ড করার পথে পাশের দেশ স্পেন। দেশটিতে তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রিতে পৌঁছায় রোববারই, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গরম আরও বাড়বে বলে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতা। প্রতিবেশী ফ্রান্সে ইতিহাসে প্রথমবার সতর্কাবস্থায় প্রায় পুরো দেশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি রয়েছে দেশের ৮৮ শতাংশ এলাকায়। সোম ও মঙ্গলবার আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ২০০ সরকারি স্কুল। দক্ষিণাঞ্চলে বারবিকিউ থেকে সৃষ্ট দাবানলে পুড়ে ছাই হয়েছে এক হাজার একর চাষের জমি, সরিয়ে নেয়া হয় শতাধিক মানুষকে।
ইতালিতে রাজধানী রোম আর মিলানসহ ২৭ শহরের মধ্যে ২১টিতেই রোববার থেকে জারি সর্বোচ্চ সতর্কতা। টুসক্যানিসহ উষ্ণতম অঞ্চলগুলোতে হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেড়েছে ২০ শতাংশ।
রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে প্রতিবেশী ক্রোয়েশিয়াতেও। দাবানলে বিপর্যস্ত পাশের দেশগুলো। গ্রিসে রাজধানী এথেন্সের কাছেই আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৩০ ফায়ারসার্ভিস কর্মী, ১২টি হেলিকপ্টার আর ১২টি বিমান মোতায়েন করেছে প্রশাসন।
গ্রীষ্মের শুরুতেই ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে তুরস্ক। পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইজমিরে দাবানলের দ্বিতীয় দিনে তীব্র বাতাসে আগুন আরও ছড়াচ্ছে। বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে পাঁচ অঞ্চলের অর্ধ লাখের বেশি মানুষ।
বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘খুব কষ্ট লাগছে। এর চেয়ে দুঃখের কিছু হয় না। ৪০ বছরের স্মৃতি এখানে আমাদের। সন্তানরা বেড়ে উঠেছে। আমার কৈশোরের স্মৃতিও এখানে।’
আরেকজন বলেন, ‘৪০ বছরের বিনিয়োগ ধ্বংস হলো। এই জায়গাকে মেরামত করে আগের রূপে ফেরানো আর সম্ভব নয়।’
ইউরোপের অনেক এলাকাতেই বছরের এই সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় পাঁচ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে। মহাদেশটিতে অস্বাভাবিক এই গরমই দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গবেষকদের হিসাবে, বিপজ্জনক তাপমাত্রা ইউরোপে চলতি শতকের আশি হাজার পর্যন্ত অতিরিক্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে।