প্রতিদিনই গাজা উপত্যকায় আগ্রাসনের মাত্রা বাড়াচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। আজ (শুক্রবার, ১৮ জুলাই) ভোর থেকে চালানো হামলায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ২৬ জনসহ অন্তত ৯৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় চালানো হামলায় প্রাণ গেছে ৩ জনের।
এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ চতুর্দশ লিও।
এছাড়া ক্যাথলিক গির্জায় প্রাণঘাতি ইসরাইলি হামলার পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘গাজার ওই চার্চে হামলার বিষয়ে প্রেসডেন্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন করেছিলেন। ক্যাথলিক চার্চে আঘাত করা ইসরাইলিদের ভুল ছিল বলে নেতানিয়াহু একটি বিবৃতি দিতে রাজি হয়েছেন।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের ফিলিস্তিনিদের হত্যা ছাড়াও, খাবার, পানি, আশ্রয়কেন্দ্রসহ সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে বাসিন্দাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে ইসরাইল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া ভাষণে এমন তথ্য তুলে ধরেছেন ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক মাজেদ বামিয়া বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কাছে এখন জীবনের চেয়ে মৃত্যু অনেক বেশি পরিচিত। ২০ লাখের বেশি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে খাদ্য, পানি, আশ্রয় সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাঁবুতেও হত্যা করা হচ্ছে। খাবার ও পানির জন্য অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় হত্যা করা হচ্ছে। হাসপাতালেও হত্যাযজ্ঞ চলছে।’
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে, গাজা উপত্যকার ভয়াবহ পরিস্থতির কথা তুলে ধরেছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল।
তিনি জানান, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে। সেই হিসেবে ইসরাইলি হামলায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ শিশুর প্রাণ যাচ্ছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, ‘একবার ভেবে দেখুন, প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিদিন একটি শ্রেণীকক্ষে থাকা শিশু নিহত হচ্ছে। এ শিশুরা যোদ্ধা নয়। জীবন রক্ষাকারী খাবার এবং ওষুধের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সময় তাদের হত্যা করা হচ্ছে এবং পঙ্গু করা হচ্ছে।’
চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনের স্থানীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, ইসরাইল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজা উপত্যকায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত। এটি মার্চ মাসে কায়রোতে হওয়া আরব শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত পরিকল্পনার অংশ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় মন্ত্রী সামি হিজ্জাভি বলেন, ‘এর জন্য ফিলিস্তিনি সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। এ পরিকল্পনাগুলো মার্চ মাসে কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব শীর্ষ সম্মেলনে অনুমোদিত আরব পরিকল্পনার অংশ। অতএব, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমরা আমাদের সমস্ত ফিলিস্তিনি সরকারি কর্মী গাজা উপত্যকায় কাজ করতে প্রস্তুত।’
এদিকে, ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম মারিভ পরিচালিত জনমত জরিপের তথ্য বলছে, প্রায় ৪৪ শতাংশ ইসরাইলি মনে করেন গাজায় অব্যাহত যুদ্ধ থেকে তাদের কোনো লক্ষ্য অর্জন হবে না। আর ৪২ শতাংশ মনে করেন এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। আর ১১ শতাংশ কোনো মতামত দেননি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবল থেকে এখন পর্যন্ত চালানো ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৮ হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে।