ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা বন্ধে স্থবির পানি-স্যানিটেশন প্রকল্প, বিপাকে ১৬ দেশ

কেনিয়ার মানুষ অপরিশোধিত পানি ভ্যবহার করছে
কেনিয়ার মানুষ অপরিশোধিত পানি ভ্যবহার করছে | ছবি: রয়টার্স
0

ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে বিপাকে পড়েছে পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প। কেনিয়া, কঙ্গোসহ অন্তত ১৬টি দেশে কয়েক ডজন প্রকল্প অর্ধ-সমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব প্রকল্প এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাসিন্দাদের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম কাটছাঁটের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। যার তিন ভাগের এক ভাগই শিশু। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা তহবিলের ৪০ শতাংশের বেশি একাই জোগান দিত ইউএসএআইডি। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে বিশ্বের নানা সহায়তা কার্যক্রম। লাখো মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি মানুষ। এছাড়া অর্ধ-সমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েক ডজন মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ১৬টি দেশের ২১টির বেশি পানি ও স্যানিটেশন প্রকল্প অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেনিয়ার তাইতা তাভেতা প্রদেশে কৃষিকাজের সেচের জন্য তিন কিলোমিটার দীর্ঘ খাল ও ড্রেন তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যেখানে বড় আকারে অর্থায়ন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা বা ইউএসএআইডি। ড্রেনগুলোতে ইট বসানো হলেও অর্থের অভাবে তা প্লাস্টার করা হয়নি। এতে দিন দিন খসে পড়ছে ইট। হুমকির মুখে কৃষিকাজ।

বিশাল এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। যদিও কেনিয়া সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যা বাসিন্দাদের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। তাদের অভিযোগ, আগের তুলনায় এই অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বেড়েছে। অর্ধ-সমাপ্ত সেচ খালগুলো ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হচ্ছে ফসলি জমি।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রতিবার বন্যায় আমার ঘর প্লাবিত হয়। খালের কাজটি শেষ হলে, আমরা নিরাপদে থাকতে পারবো।’

প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহের জন্য পড়ে থাকা অব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী রড, সিমেন্ট, তার ইত্যাদি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বাসিন্দারা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে প্রকল্পের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সংকটের মুখে তাদের কৃষি কাজ।

এদিকে পূর্ব কঙ্গোতে অকার্যকর হয়ে আছে ইউএসএআইডির বিশুদ্ধ পানির প্রকল্প। এই অঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় পানি সংগ্রহ করতে গিয়েও প্রাণ হারিয়েছে বহু শিশু। পানির সন্ধানে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে নারীসহ বহু মানুষ।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘ভোরবেলায় পানির খোঁজে বের হয়ে শিশুরা সন্ধ্যায় খালি হাতে ফিরে আসে। এছাড়া ছোট মেয়েরা পানি আনতে গিয়ে ধর্ষণ ও নানা নির্যাতনের শিকার হয়।’

উত্তর ও দক্ষিণ কিভু শহরসহ কঙ্গোর প্রায় ১৪ লাখ বাসিন্দার জন্য টেকসই পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রায় পাঁচ কোটি ডলার অর্থায়ন করে ইউএসএআইডি। ২০২৭ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এখন তা আটকে গেছে। অযত্নে নষ্ট এবং লুট হয়ে যাচ্ছে পাইপ, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী।

ইমি জিবু প্রকল্পের কারিগরি প্রধান ইভেস এন্টাবোবা বলেন, ‘টেকসই পানি ব্যবস্থা কার্যক্রমের প্রকল্পটি খুবই দুর্দান্ত ছিল। এটি এই অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির মজুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করতো। বর্তমানে অর্থ সংকটে তা মাঝপথে আটকে আছে। ট্যাঙ্ক তৈরি করা হলেও এখনো তা চালু করা সম্ভব হয়নি।’

এসব অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিজস্ব অর্থায়নই একমাত্র ভরসা। ট্রাম্পের ঘোষণার পর সব প্রকল্পের কাজ বাকি রেখে ফিরে গেছে সহায়তা সংস্থাগুলো। যা বাসিন্দাদের জীবনকে আরও হুমকির মুখে ফেলেছে।

এসএস