আপনি যদি কোনো এক রোববার সন্ধ্যায় শিকাগোর নর্থ অ্যাভিনিউ বিচে যান এবং হঠাৎ অনেক মানুষের একসাথে চিৎকার করার শব্দ শুনে চমকে উঠেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা কোনো প্রতিবাদ কিংবা নাট্য কর্মসূচি নয়—এটা হলো 'স্ক্রিম ক্লাব শিকাগো' নামের একটি অভিনব উদ্যোগ, যেখানে মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ভেতরের মানসিক চাপ, দুঃখ ও হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জোরে চিৎকার করেন।
সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শিকাগোতে এসে এই বিশেষ আয়োজনটি শুরু করেছেন ম্যানি হার্নানদেজ। তিনি একজন লাইফ ট্রান্সফরমেশন কোচ এবং ব্রেথওয়ার্ক প্রশিক্ষক। তিনি জানান, জুন মাসে এক কঠিন দিনে এই পরিকল্পনাটি মাথায় আসে।
স্ক্রিম ক্লাব শিকাগোর উদ্যোক্তা ম্যানি হার্নানদেজ বলেন, ‘সেদিন আমার সঙ্গীর সঙ্গে দিনটি ভালো যাচ্ছিলো না। হঠাৎ আমি তাকে বললাম, চলো লেকের ধারে গিয়ে চিৎকার করি। সে রাজি হয়ে গেল।’
তাদের সেই চিৎকারে দেখে আশপাশের বেশ কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেদিনই হার্নানদেজ সিদ্ধান্ত নেন, এটিকে নিয়মিত আয়োজন হিসেবে চালু করার।
ম্যানি হার্নানদেজ বলেন, ‘আমি বললাম, আমরা একটু চিৎকার করতে যাচ্ছি, আপনাদের বিরক্ত করছি, দুঃখিত। আপনারা চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। আর তারা রাজি হয়ে গেলেন। কেউ কেউ কেঁদেও ফেললেন।’
গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে অনুশীলন শুরু হয়। এরপর নিজের ভেতরের জমে থাকা ক্লান্তি, দুঃখ, রাগ বা হতাশা মুক্ত করার জন্য অংশগ্রহণকারীরা তিনবার গলা ছেড়ে চিৎকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একটা প্রেশার কুকারের মতো। প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের জন্য এক ধরনের হরমোন জমছে শরীরে। যদি সেটাকে মুক্ত করার উপায় না থাকে, তাহলে একসময় সেটা বিস্ফোরণ ঘটাবে।’
৩১ বছর বয়সী হেভি মেটাল সংগীতশিল্পী আলেকজান্ডার রুভালকাবা নিয়মিত আসেন এ সেশনগুলোতে। তার মতে, শুধু চিৎকার নয়—এই উদ্যোগের সামাজিক দিকটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সংগীতশিল্পী আলেকজান্ডার রুভালকাবা বলেন, ‘আমি এখানে আসি কারণ এমন কিছু আছে যা আমি ছেড়ে দিতে চাই। এই চিৎকারের পর আমি নিজেকে অনেক বেশি হালকা, অনেক বেশি আনন্দিত মনে করি।’
এই স্ক্রিম ক্লাবকে আরও বড় করার স্বপ্ন দেখেন হার্নানদেজ।
ম্যানি হার্নানদেজ বলেন, ‘যদি আমাদের সমাজে এই ধরনের মুক্তির পথ আরও বেশি থাকতো, তাহলে মানুষ আরও শান্ত, আরও সহানুভূতিশীল হতো’
এই উদ্যোক্তার ইচ্ছা সবাই নিজের মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুক।