জলবায়ুর বিপর্যয়ে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডব

জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের
জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের | ছবি: সংগৃহীত
0

জলবায়ুর বিপর্যয়ের কারণে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে বিশ্বকে। ঝড়, বৃষ্টি, ভূমিধস, খরা, বন্যা ও দাবানলে প্রাণ যাচ্ছে হাজারো মানুষের। বিজ্ঞানীদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি ও গ্রিন হাউস গ্যাসের ব্যবহার না কমাতে পারলে আগামী দিনগুলো আরও ভয়াবহ হবে। ঝড়, বৃষ্টি, ভূমিধস, খরা, বন্যা ও দাবানলের ভয়াবহতায় নাজুক বৈশ্বিক জলবায়ুর। আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় প্রতিবছরই প্রাণ যাচ্ছে কয়েক শ’ মানুষের। ক্ষয়ক্ষতির তালিকাও কম নয়।

২০২৪ সালে ইতালি ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ভয়াবহ খরা, নেপাল, সুদান ও ইউরোপের দেশগুলোতে বন্যা, মেক্সিকো, মালি ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে তীব্র গরমে হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপিন্সে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রার পারদও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ২০২৪ সালে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোন কিছুতেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি দিন দিন ভেস্তে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বায়ুমণ্ডল গরম থেকে আরও গরম হয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের বিজ্ঞানীদের মতে, শিল্পযুগের আগের জলবায়ুতে প্রতি ১০ বছরে একবার যে তাপপ্রবাহ আসত, তা এখন ১০ বছরে ২.৮ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং তা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতর হবে।

জলবায়ু বিপর্যয়ের আরেক অভিশাপ দাবানল। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যঞ্জেলেসে দাবানলে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। পুড়ে গেছে ১২ হাজার হেক্টর বনভূমি। বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ায় শুষ্ক পরিবেশে দাবানলের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তা দীর্ঘ সময় নিয়ে জ্বলতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। গরম আবহাওয়াও গাছ পালা থেকেও আর্দ্রতা শুষে নেয়। এতে সহজেই আগুনের ছড়িয়ে পড়ে এক গাছ থেকে আরেক গাছে।

জলবায়ু বিজ্ঞানী এরিক ফিশার বলেন, ‘আর্দ্র তাপমাত্রার ফলে বায়ুমণ্ডল শুষ্ক হয়ে গেছে। এতে গাছে তৃষ্ণা বেড়েছে। গাছও মাটি থেকে পানি শোষণ করছে প্রচুর। এ পরিস্থিতিতে গাছ সহজেই দাবানলে পুড়তে পারে।’

দাবানল নিয়ন্ত্রণে বন ব্যবস্থাপনা এবং আগুনের উৎসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইইউ কমিশনের তথ্যমতে, ইউরোপে ১০টির মধ্যে ৯টির বেশি আগুন মানুষের কার্যকলাপের কারণে ঘটে। যেমন বনভোজন, বারবিকিউ পার্টি, বিদ্যুতের লাইন থেকেও আগুনের ঘটনা ঘটে।

জলবায়ু পরিবর্তনে ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। কারণ উষ্ণ বায়ুমণ্ডল আরও বেশি বেশি ধরে রাখতে পারে, যার ফলে তীব্র বৃষ্টিপাত হয়। মার্কিন জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প সর্বোচ্চ রেকর্ডে পৌঁছায়।

জলবায়ু বিজ্ঞানী এরিক ফিশার বলেন, ‘তাপপ্রবাহ, খরা এবং ভারী বৃষ্টিপাত অতীতে ঘটতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোকে ঘন ঘন ঘটছে। এটি আসলে উষ্ণ জলবায়ু ও পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। যা এটিকে আরও তীব্র করে তোলে।’

ফিলিপিন্সে ২০২৪ সালে ১ মাসে ৬ বার টাইফুন আঘাত হানে। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন তথ্য অনুযায়ী, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রেকর্ড সর্বোচ্চ ঘূর্ণিঝড়।

ফিলিপিন্স ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পর পর একাধিকবার টাইফুন ও হ্যারিকেন আঘাত হানে। বিজ্ঞানীদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ না করলে ও গ্রিন হাউস গ্যাস না কমাতে সামনের দিনে ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা, খরা ও দাবানল আরও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। যার পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ।

ইএ