দূষণ থেকে সবুজ স্বর্গে: শি জিনপিংয়ের স্বপ্নের ইউকুন গ্রাম

চীনের ছোট্ট গ্রাম ইউকুনের ছবি
চীনের ছোট্ট গ্রাম ইউকুনের ছবি | ছবি : সংগৃহীত
0

দুই দশকের অবিরাম প্রচেষ্টায় চীনের ইউকুন গ্রাম বদলে গেছে ধূসর খনি এলাকা থেকে সবুজ অরণ্যে। একসময় চুনাপাথর খনি ও সিমেন্ট উৎপাদনের কারণে দূষণে জর্জরিত এই গ্রাম এখন শহুরে মানুষের কাছে প্রকৃতির স্বর্গ। বছরে ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন এখানে, যা ২০২৪ সালে এনে দিয়েছে ৭৫ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি রাজস্ব। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই গ্রামটিকে এমন রূপ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন শি জিনপিং।

একসময় পরিবেশ দূষণের নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল পূর্ব চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম ইউকুন। বছরের পর বছর ধরে সবুজ অরণ্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সেই গ্রামটি। ফলে জায়গাটি এখন রূপ নিয়েছে প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে।

এমন দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে যে, গ্রামটি এখন অবকাশ যাপনের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারায় এ গ্রামমুখী হচ্ছেন শহুরে বাসিন্দারা। আর এ পর্যটনকে পুঁজি করে পাঁচ বর্গকিলোমিটারের এই গ্রামে গড়ে উঠেছে শত শত হোমস্টে।

ইউকুনের প্রথম হোমস্টে চুনলিন ইনের মালিক প্যান চুনলিন, যিনি এক সময় কৃষি কাজ করতেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের উৎপাদিত শাকসবজি ও মাছ রান্না করে অতিথি আপ্যায়নে গর্ববোধ করেন তিনি। ২০২০ সালে তার হোমস্টে ঘুরে দেখতে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট শি-জিনপিংও।

সবজি উৎপাদনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের শাকসবজি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত, দামও নাগালের মধ্যে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত।’

আরও পড়ুন:

ঝেজিয়াং প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম ইউকুনের এই অকল্পনীয় পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে, ২০ বছর আগে চীনা প্রেসিডেন্ট শি-জিনপিংয়ের নেয়া পদক্ষেপের ফলে। যিনি তখনও প্রেসিডেন্ট হননি। ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ঝেজিয়াং প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক। স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বচ্ছ পানি আর সবুজে ছেয়ে যাবে গ্রামটির পাহাড় ও সমতল ভূমি।

তখন শি-জিনপিংয়ে বলেছিলেন, বাস্তুতন্ত্র নিজেই একটি অর্থনৈতিক সম্পদ। সেই থেকে শুরু হয়েছিলো ইউকুনের পরিবেশ রক্ষার যাত্রা, যা এখন বাস্তব এবং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘ভালো ধারণা আছে, এমন অভিজ্ঞ লোকেদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অলস স্থানগুলোকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করেছি। আমাদের ‘গ্লোবাল পার্টনারস’ প্রোগ্রামের অধীনে ৬০ টিরও বেশি প্রকল্প চালু করা হয়েছে।’

এই অগ্রযাত্রায় যুক্ত হচ্ছেন অনেক বিদেশিও। গড়ে ওঠা হোমস্টেতে চাকরি যেমন করছেন, তেমনি অনেক বিদেশিও অবকাশ যাপনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে পোল্যান্ডের জেসিকা অন্যতম।

বিদেশি অভিবাসীদের একজন বলেন, ‘আমি অন্যান্য বিদেশিদের এখানে আসতে উৎসাহিত করতে চাই। পাশাপাশি আমি চাই তারাও এখানে বসতি স্থাপন করুক।’

১৯৯০ এর দশকে, ইউকুন চুনাপাথর খনি এবং সিমেন্ট উৎপাদনে সমৃদ্ধ ছিল। এতে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হতে থাকায়, ২০০৩ সালে গ্রামকে পুনরুজ্জীবিত করতে কর্মসূচি চালু করে ঝেজিয়াং। 

সেই আওতায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল খনি এবং সিমেন্ট কারখানা। ফলে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবন-জীবিকা নিয়ে তৎকালীন সময়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন অনেক গ্রামবাসী।

এখন সেই গ্রামেই বছরে দশ লাখেরও বেশি দর্শনার্থীর আনাগোনায় পর্যটন ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে। ২০২৪ সালে এ খাত থেকে রাজস্ব এসেছে ৭৫ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। 

আর গ্রামটিতে ২০০৫ সালে বছরে গড় মাথাপিছু আয় ১ হাজার মার্কিন ডলার থাকলেও, তা ২০২৪ সালে বেড়ে ৯ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এমনকি ২০২১ সালে ইউকুনকে সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে মনোনীতও করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা।

এসএইচ