অস্ত্র বিরতির চুক্তির আওতায় শুক্রবার থেকেই অবরুদ্ধ গাজার কিছু এলাকা খালি করে সরে যেতে শুরু ইসরাইলি সেনাবাহিনী। দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর নিরাপত্তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় ফিরতে শুরু করে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা।
এর মধ্যেও উত্তেজনা। গাজার শাসকদল হামাসের অভিজাত বাহিনীর দুই সদস্য আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়। নিহতদের একজন হামাসের সশস্ত্র শাখার জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ও সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ইমাদ আকিলের ছেলে। হত্যার পর নিহতদের মরদেহ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় কঠোর অবস্থানে হামাস।
হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হচ্ছে গাজা শহরের সাব্রা এলাকার প্রভাবশালী দুগমুশ গোষ্ঠীকে। এরই মধ্যে বড় একটি এলাকা ঘিরে ফেলে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসমেত ৩শ’র বেশি দুগমুশ বন্দুকধারীকে হামাস সদস্যরা আটকে ফেলেছে বলে জানা যাচ্ছে। শনিবার সকালে এক দুগমুশকে হত্যা ও ৩০ জনকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছে হামাসের বিরুদ্ধে।
অনেক বছর ধরে দুগমুশদের নিজস্ব অস্ত্রভাণ্ডার বিদ্যমান। কিন্তু তাও গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন হামাসের মজুত থেকে অস্ত্র লুটের অভিযোগ রয়েছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে, গাজায় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইসরাইলি সেনাদের খালি করে দেয়া এলাকাগুলোতে যোদ্ধাদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে হামাস।
পুরো গাজা উপত্যকায়, যেগুলো দখলদারদের অধীনে নয়, সেসব জায়গায় বাহিনী মোতায়েন করছে স্বরাষ্ট্র বিভাগ। রাস্তার মোড়ে, বারে, নাগরিকদের নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় মোতায়েন চলছে। যেন মানুষ অনুভব করতে পারে যে এখানে আইনের শাসন আছে এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর অভ্যন্তরীণ সহিংসতার শঙ্কা এড়াতে যোদ্ধাদের জড়ো করছে হামাস। এরই মধ্যে ডেকে পাঠানো হয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সাত হাজার সদস্যকে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঁচ নতুন গভর্নরকেও, যাদের কয়েকজন আগে হামাসের সশস্ত্র শাখার বিভিন্ন ব্রিগেডেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
জানা যায়, ফোন কল আর টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে বার্তা দেয়া হচ্ছে যোদ্ধাদের। বলা হচ্ছে, অপরাধী আর ইসরাইলের সহযোগীদের নির্মূলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যোদ্ধাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। এরই মধ্যে গাজা-জুড়ে কয়েকটি জেলায় হামাসের সশস্ত্র শাখার সদস্যদের মোতায়েনের খবরও মিলেছে। যোদ্ধাদের অনেকেই সাদা পোশাকে থাকলেও বাকিদের পরনে গাজা পুলিশের নীল রঙের ইউনিফর্ম।
যুদ্ধ শেষে গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে কারা, সে প্রশ্নে তীব্র অনিশ্চয়তার মধ্যেই বাড়ছিল হামাসের সেনা সমাবেশের শঙ্কা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের শুরুটাই জটিল হতে পারে এই এক কারণে, যেখানে হামাসকে শর্ত দেয়া হয়েছে নিরস্ত্রীকরণের।
বিবিসি অ্যারাবিক সাইদ শেহাতা বলেন, ‘এ চুক্তি, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ, এটা কি কয়েক ধাপও এগোবে? নাকি এগোবে না? কারণ লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা আছে। আবার নিরাপত্তা বাহিনীকে ডেকে পাঠানোর মানে হলো হামাস এখনও গাজায় উপস্থিত। আবার নিরাপত্তা বাহিনীকে ডেকে পাঠানোর মানে হলো হামাস সহজে আত্মসমর্পণ করবে না। তাই হামাসকে বাদ দিয়ে গাজা শাসন বা গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আলোচনা অত্যন্ত জটিল।’
পরিস্থিতি বিপজ্জনক উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
রামাল্লাহ ফাতাহ সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য তৌফিক আল-তিরাবি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনতা আর তাদের দাবির জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি। এই হুমকি মোকাবিলায় একটা একক, স্বাধীন সিদ্ধান্তে আসতে আমাদের হবেই। এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা আমাদের মাতৃভূমি আর এখানকার মানুষের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করবে। গাজা থেকে হামাস নির্মূল করা সম্ভব নয়। হামাস আমাদের জাতীয় পোশাকের মতো।’
বাতাসে গুঞ্জন, গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরাইলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময় শেষে উপত্যকায় ইসরাইলের সেনাবাহিনীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার এবং হামাসকে নির্মূলের দায়িত্ব নিতে পারে দুগমুশের মতো গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।





