রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরুর তিন বছরের বেশি সময়ে ইউক্রেনে সহিংসতা কেবলই বেড়েছে। রুশ সেনাদের দখলকৃত অঞ্চল প্রতি বছরই একটু একটু করে বাড়ছে, বেশিরভাগই ইউক্রেনের পূর্বে।
ইউক্রেনের পুরোটা দখল করতে চান বলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যের পরপরই দেশটিতে এক রাতে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় রাশিয়া। গতকাল (রোববার, ২৯ জুন) প্রথম প্রহরে আকাশপথে ৪৭৭টি ড্রোন ও ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্রসহ ৫৩৭ দফা হামলা হয় ইউক্রেনে, জানিয়েছে দেশটির বিমানবাহিনী। এর মধ্যে ৪৭৫টি হামলা ঠেকিয়ে দেয়া হয় আকাশেই। কিন্তু শত্রুপক্ষের জোরদার হামলার মুখে পিছু হঠতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনের এফ সিক্সটিন বোমারু বিমান, প্রাণ যায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার সামরিক এক পাইলটের।
কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওডেসা থেকে শুরু করে খারসন, খারকিভ এবং আরও অনেক অঞ্চলে রাতভর চলে হামলা। প্রাণ যায় অনেকের।
ইউক্রেনের স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘রাশিয়ার শাহেদ ড্রোন প্রায়ই উড়ে যায়, আওয়াজ পাই আমরা। কিন্তু সাধারণত সে আওয়াজ আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। এবারই প্রথম আওয়াজটা ধীরে ধীরে বাড়ছিল বলে বাইরে তাকিয়ে দেখি ভবনের দিকেই সোজা এগিয়ে আসছে। এরপরই শক্তিশালী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলাম।’
এমন পরিস্থিতিতেই দুই দশক পর অটোয়া কনভেনশন থেকে বেরিয়ে গেলো ইউক্রেন। রোববার আন্তর্জাতিক এক চুক্তি থেকে দেশটির নাম প্রত্যাহার করে ডিক্রি জারি করেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ১৯৯৭ সালের এ চুক্তিতে মানবঘাতী অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ডমাইন বা এপিএল উৎপাদন, ব্যবহার, মজুত ও সরবরাহ নিষিদ্ধ রয়েছে অটোয়া কনভেনশনে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া কখনোই এই চুক্তির অংশ ছিল না। ফলে বর্বরতার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে দেশটি ঠিকই এপিএল ব্যবহার করে যাচ্ছে এ যুদ্ধে। তাও শুধু এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নয়, রুশ ঘাতকদের বরাবরের প্রিয় অস্ত্র এটি। তাই এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হলো আমাদের। রাশিয়ার সাথে অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে, এমন সব দেশের জন্যই বিষয়টি উদ্বেগের।’
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার জনবল। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য, দেশটির ভেতরে অবস্থান করছে প্রায় সোয়া ছয় লাখ রুশ সেনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার- আইএসডব্লিউয়ের তথ্য, ধীরে ধীরে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের উত্তর ও পশ্চিমে আর পোক্রোভস্ক শহরসহ এক হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এগোচ্ছে রুশ সেনারা। তবে টোরেৎস্কের পশ্চিমে ইউক্রেনের সেনাদের অবস্থান আটকে দিয়েছে রুশ সেনাদের।
এদিকে বন্দি বিনিময়ের পর তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের সাথে তৃতীয় দফার আলোচনায় সম্মত হয়েছে যুদ্ধরত দেশ দুটি। এর আগে দ্বিতীয় দফার আলোচনার পর এক হাজার করে বন্দি বিনিময় করে ইউক্রেন ও রাশিয়া। আর ইউক্রেনের ছয় হাজার সেনার মরদেহ দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় রাশিয়া।
অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করলো, ইউক্রেনকে এতোদিন যুদ্ধে সহায়তা দিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে লেনদেন করতে পারবে রাশিয়ার গ্যাজপ্রমব্যাংক।