ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে আরও ২ গ্রাম দখল করেছে পুতিন সেনারা

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার হামলা
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার হামলা | ছবি: রয়টার্স
0

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলায় গতকাল (শনিবার, ২৬ জুলাই) আরও পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের নিপ্রো অঞ্চলে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ গেছে তিনজনের। বিপরীতে রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছে দুইজন। এদিকে মস্কো দাবি করছে, শুক্রবারের (২৫ জুলাই) পর শনিবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে আরও দুটি গ্রাম দখল করেছে পুতিন সেনারা। তবে রাশিয়ার এই সাফল্যে বিচলিত নন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট, উৎসাহ যোগাচ্ছেন সেনাদের। আর ক্রেমলিন বলছে, শান্তি আলোচনা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠক সম্ভব না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য পুতিনকে সর্বোচ্চ চাপ ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছেন, তখন যুদ্ধের কৌশলগত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শুক্রবার প্রথম ধাপে কিয়েভ সেনাদের ৫টি ঘাঁটি দখলের পর এবার নিপ্রো অঞ্চলে আরও দুটি গ্রামের দখল নিয়েছে পুতিন বাহিনী।

শনিবার ২০০ এর বেশি ড্রোন ও ৩০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি নিপ্রোতে হামলা চালায় মস্কো। এর অধিকাংশ ভূপাতিত করা হলেও রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, ইন্টারসেপ্টরের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া ১০টি মিসাইল ও ২৫টি ড্রোন কিয়েভ সেনাদের নয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও হামলা হয়েছে সুমির মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত সিটি সেন্টারেও।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি। অপেক্ষা করছি কখন এই অভিশপ্ত রাত শেষ হবে।’

বিপরীতে রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে পাল্টা ড্রোন হামলা চালায় কিয়েভ। রয়টার্স প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রাশিয়ার বেলগোরোদে ইউক্রেনের ড্রোন থেকে অ্যাম্বুলেন্স রক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে লোহার তৈরি খাঁচা।

তবে রুশ সেনাদের এই সাফল্যে বিচলিত নন ভলোদিমির জেলেনস্কি। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, পুতিন বাহিনীর অভিযানের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান থেকে থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তুলছে কিয়েভ সেনারা।

ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনীয় সেনাদের অভিযান ও সম্মুখ যুদ্ধে অগ্রগতি সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চাই। সেনাসদস্য, গোয়েন্দা বিভাগকে কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা রুশ ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে সফল হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে। সীমান্ত থেকে দখলদার রুশ বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করা হবে।’

এদিকে খুব তাড়াতাড়ি ইউক্রেন-রাশিয়ার এই সংঘাতের নিষ্পত্তি হবে না- এমন আভাস দিচ্ছিলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। শুক্রবারের এক বিবৃতিতে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করেন ক্রেমলিন মুখপাত্র। পাশাপাশি এবার জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠক নিয়েও কথা বলেছেন দিমিত্রি পেসকভ। বলেন, যুদ্ধবন্ধে একটি শান্তি প্রস্তাবের খসড়া ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। তবে শান্তি আলোচনা চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠক সম্ভব না।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘সম্মেলন বা বৈঠক কোনোটাই শান্তিচুক্তি সবশেষ ধপে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সম্ভব না। আমাদের প্রতিনিধিরা চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ন করেছেন। ইউক্রেন তা মেনে না নিলে বৈঠক আয়োজনের কোনো অর্থ নেই।’

স্থলভাগে আধিপত্য বাড়ানো ছাড়াও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে মস্কো। রুশ গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, চলমান সংঘাত বন্ধে ভূমিকা রাখা থেকে শুরু করে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় রাস্তায় নামতে পারে কিয়েভবাসী- বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে দাবি করছে আরটি।

এসএস