অবৈধ অভিবাসী তাড়াতে আগামী বছর থেকে আগ্রাসী ভূমিকা নেবে ট্রাম্প প্রশাসন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে আগামী বছর থেকে আরও আগ্রাসী ভূমিকা নেবে ট্রাম্প প্রশাসন। কঠোর নীতি কার্যকরে মার্কিন অভিবাসন বিভাগ ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে ২০২৯ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১৭ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস বা কাজের অনুমতির মেয়াদ ফুরিয়েছে এমন অভিবাসীদের ধরতে আগামী বছর থেকে স্থানীয় খামার ও কারখানায় অভিযান চালাবে কাস্টমস বিভাগ।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস শহরের সেন্ট পলস এলাকায় অবৈধ অভিবাসীদের আটকে অভিযান চলছে। মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের দেখা মাত্র আতঙ্কে এই বিশেষ অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া সোমালিয়ার অভিবাসীরা। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন শক্ত অবস্থান সমর্থন করছেন না মিনেসোটার স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই।

তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সাউন মিনিয়াপোলিস থেকে দুই ব্লক দূরে থাকি। যখন শুনলাম আমাদের এলাকায় ট্রাম্প তার অভিবাসন বিভাগের বাহিনী পাঠিয়েছেন, তখন আর বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না।’

মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস নয়, এ দৃশ্য দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের বহু অঙ্গরাজ্যে। দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতা নেয়ার পর অভিবাসন নীতির জেরে সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

শুধু অবৈধ অভিবাসী নয়, অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্যেও কঠিন ব্যবস্থা নিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িকভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া হাইতি, ভেনেজুয়েলা ও আফগানিস্তানের লাখ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশীর আইনি অনুমোদন বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আগামী বছর থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ অভিবাসীকে দেশছাড়া করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। চলতি বছর দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন প্রায় ছয় লাখ ২২ হাজার জনকে।

আরও পড়ুন:

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ এর নভেম্বর পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৫৪ হাজার অবৈধ বা অনিয়মিত অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন অভিবাসন বিভাগ। এর মধ্যে অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগ ছাড়া ৪১ শতাংশ মানুষের কোনো অপরাধের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। অভিবাসী অধিকার রক্ষাকারী একাধিক সংগঠনের অভিযোগ, অপরাধী নয় এমন সাধারণ অভিবাসীদেরও আটক করছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এসব কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়ছেন না ট্রাম্প। ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসীদের দেশ ছাড়া করতে ২০২৬ সালে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হচ্ছে ওয়াশিংটন। ২০২৯ সাল নাগাদ মার্কিন অভিবাসন বিভাগ ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে অতিরিক্ত ১৭ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

আগামী বছর মধ্যবর্তী নির্বাচন থাকায় ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযান কিছুটা কমবে এমন ধারণা করা হলেও এমন পর্যবেক্ষণ নাকচ করেছে হোয়াইট হাউজ। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহর ছাড়াও অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় ট্রাম্পের বিশেষ বাহিনী। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের খামার ও বড় ফ্যাক্টরিগুলোতে কর্মরত অনিয়মিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে ট্রাম্প প্রশাসন। অর্থনৈতিক কারণে চলতি বছর এদের ছাড় দিয়েছিল হোয়াইট হাউজ।

সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেয়া গেছে, গেল মার্চে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে সমর্থন ছিল ৫০ শতাংশ নাগরিকের, বড় বড় শহরে অভিযান শুরুর পর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসে তা ৪১ শতাংশে নেমে গেছে। মিয়ামি শহরে অভিবাসী বিরোধী অভিযানের জেরে ৩ দশক পর সেখানে ডেমোক্র্যাট মেয়র নির্বাচিত করেছেন ভোটাররা। আগ্রাসী অভিবাসন নীতির কারণে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমলেও, বর্তমান প্রশাসনের মধ্যে ছাড় দেয়ার লক্ষণই দেয়া যাচ্ছে না।

এসএস