ট্রাইব্যুনাল মামলার পরবর্তী শুনানি ১৬ জুন ধার্য করেছেন। এ ছাড়াও, আসামিদের গ্রেপ্তারেরও নির্দেশ দেয়া হয়।
এর আগে, গতকাল (শনিবার, ৩১ মে) চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচার দৃশ্যমান হবে। বিচার এমনভাবে করা হবে কেউ যেন মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্ত অন্যরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যার নির্দেশনা, প্ররোচনা, উসকানিসহ পাঁচ অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। একইসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও মিলেছে একই অপরাধের প্রমাণ।
আজ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়, ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা। এই বিচার হবে নিরপেক্ষ একটি ঐতিহাসিক দলিল। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে, কেউই বিচারের ঊর্ধ্বে নয়।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৩৫ পৃষ্ঠার ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করছেন প্রসিকিউশন টিম।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন টিম জানায়, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের সূত্রপাত ঘটেছিলো ১৯৭৩ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে। স্বাধীনতার পরপরই জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বাকশাল গঠন করেছিলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে ধ্বংসের মাধ্যমে; দলীয় বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে, গুম খুন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে, পিলখানা, শাপলা গণহত্যার মাধ্যমে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে; মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার শব্দের অপব্যবহার করে ঘৃণার রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলো। ইসলামপন্থি মানুষ মাত্রই অমানুষ ও রাজাকার, এই ঘৃণা প্রতিষ্ঠা করেছিলো আওয়ামী লীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মরণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে টেলিফোনে আন্দোলনকারীদের শেষ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলো শেখ হাসিনা।
আরো পড়ুন:
গত বছরের ৫ আগস্ট আ.লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ২৪ জুন ট্রাইব্যুনালে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের নির্ধারিত তারিখ থাকলেও আজ (রোববার) তা দাখিল করার কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর।
জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) কমিশনারসহ আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২৫ মে দাখিলের পর আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ৩ জুন এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।