‘যে দমন করতে পারবে জুলাই আন্দোলন, সেই পাবে পুরস্কার’—ট্রাইব্যুনালে ১৩ পুলিশ সদস্যের জবানবন্দি

জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলি চালানোর দৃশ্য
জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলি চালানোর দৃশ্য | ছবি: এখন টিভি
0

গেলো বছরের জুলাই-আগষ্টে প্রায় প্রতিদিন আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর চাইনিজ রাইফেল চালানোর নির্দেশ দেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং তৎকালীন যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। ‘যে দমন করতে পারবে জুলাই আন্দোলন, সেই পাবে পুরস্কার’— আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থায় ১৩ পুলিশ কর্মকর্তার জবানবন্দিতে এমন শর্তের কথা উঠে এসেছে।

জুলাই-আগষ্টে সাধারণ জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। কখনো রাবার বুলেট আবার কখনো চায়না রাইফেল। বন্দুকের উল্টো পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার প্রশ্ন ছিল, ‘কাদের নির্দেশে গুলি চালাচ্ছে পুলিশ?’

এখন টিভির হাতে এসেছে সেই সময় দায়িত্বে থাকা খোদ পুলিশ সদস্যদের জবানবন্দি, যারা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের স্বাক্ষী। তদন্ত সংস্থাকে কী বলেছেন তারা?—সে কথা-ই জানার চেষ্টা করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট লং-মার্চ টু ঢাকার দিন ভোর ৫টায় শাহবাগ থানায় অবস্থান নেয় ১৩ এপিবিএন। সে সময় সেখানে ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, নির্দেশনা দেন অফিসারদের। 

ভোর ৬টার দিকে আসেন ডিএমপির তৎকালিন যুগ্ম-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, নির্দেশনা দেন সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগের। এরপর সকাল ৯টায় ডিএমপি রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম শাহবাগ থানায় আসেন এবং ডিএমপি কমিশনার ও যুগ্ম-কমিশনারের বরাত দিয়ে আন্দোলন দমনে সরাসরি গুলি করার নির্দেশনা দেন।

আরও পড়ুন:

সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সদস্যদের কয়েকবার এডিসি আখতারুল ইসলাম শহিদ মিনারের দিকে এগিয়ে আসা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার দিকে গুলি করতে জোর করেন। তা মানতে না চাইলে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করতে থাকেন এডিসি আখতারুল।

গুলি না করায় অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা কন্সটেবল সুজনের হাতে তুলে দেন। কোনো কারন ছাড়াই গুলি করতে বলেন হানিফ ফ্লাইওভার, নাজিমুদ্দিন রোড ও বকশিবাজার মোড়ের দিকে। 

সাবেক এই এডিসি বলেন, ‘সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার ও তৎকালীন যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।’

জবানবন্দিতে আরও উঠে এসেছে, তারা পুরো শাহবাগ থানায় এসে ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের আন্দোলন দমনে গুলি করাসহ অন্যান্য বিষয়ে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনো কারণ ছাড়াই সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাসগান ও শটগান দিয়ে গুলি করার পাশাপাশি যারা গুলি চালাচ্ছিল না, তাদের হুমকি দেন।

এর আগেই ১৭ ও ১৮ জুলাই সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সব অফিসারদের ছাত্র আন্দোলন দমনে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি নিলিং পজিশনে গিয়ে চায়না রাইফেল দিয়ে গুলির নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেছিলেন, আন্দোলন দমনে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগকারীরা পাবেন অর্থ পুরস্কার।

এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জবানবন্দি দিয়েছেন ৪২ জন, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ১৩ জন।

এছাড়াও প্রতিদিনই বার বার ওয়ারলেস বেতারে ডিএমপি কমিশনার নির্দেশনা দিতে থাকেন সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের। এমন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে স্বাক্ষীদের জবানবন্দীতে।

উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চানখারপুলে শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে হত্যা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চলছে সাক্ষ্যগ্রহন। এ মামলার স্বাক্ষী মোট ৪২ জন।

এসএইচ